বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নিষ্ক্রিয়দের হাতেই বরিশাল বিএনপি

মহানগরসহ দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা, ত্যাগীদের ক্ষোভ

রাহাত খান, বরিশাল

দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করে দুঃসময়ে দল এড়িয়ে চলার পুরস্কার পেয়েছেন বরিশাল বিএনপির নেতারা। গতকাল তাদের হাতে বরিশাল বিএনপির আগামীর নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। বরিশাল মহানগর এবং দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপির পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে গতকাল ঘোষণা করা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে। বরিশাল মহানগরে মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক ও আলী হায়দার বাবুলকে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। অপর দিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে মজিবর রহমান নান্টুকে আহ্বায়ক ও আকতার হোসেন মেবুলকে সদস্যসচিব এবং উত্তর জেলা বিএনপিতে দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে আহ্বায়ক ও মিজানুর রহমান মুকুলকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। ঘোষিত তিনটি কমিটিতে নিষ্ক্রিয় ও দুঃসময়ে দল এড়িয়ে চলা নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বঞ্চিতরা। ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের বাদ দিয়ে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ গত এক যুগে দলের সব কর্মসূচি এড়িয়ে চলা নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ২০১০ সালে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর বিএনপির সংক্ষিপ্ত কমিটি গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ১৭১ সদস্যবিশিস্ট বরিশাল মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর সাধারণ সম্পাদক শাহিনের মৃত্যুর পর সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে করা হয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। গত প্রায় এক যুগে দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা মামলা-হামলা এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন তাদের ঠাঁই হয়নি মহানগরীর নতুন এই কমিটিতে। বিশেষ করে সদস্যসচিব নির্বাচিত হওয়া মীর জাহিদুল কবির দীর্ঘ বছর দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ জেলায় আহ্বায়ক নির্বাচিত হওয়া মজিবর রহমান নান্টু সাবেক ছাত্রনেতা হলেও গত এক যুগে তেমন একটা দলের পাশে থেকে হাঁটেননি। দল এড়িয়ে আইন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এ কারণে কোনো মামলাও নেই তার নামে। এই কমিটির সদস্যসচিব মেবুল সাবেক ছাত্রনেতা হলেও তিনি সাম্প্রতিক বছরে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বিগত দুই দফা আন্দোলনের সময়ও তেমন একটা কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদ্যবিদায়ী সভাপতি এবায়দুল হক চাঁনকে এই কমিটিতে উপেক্ষা করায় খোদ তার বিরোধী মতের বিএনপি নেতারাও বিস্মিত হয়েছেন। উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহীদুল্লাহ এক সময় নিষিদ্ধ সর্বহারা দলের সদস্য ছিলেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। বিতর্কিত হওয়ায় এর আগে জেলার হিজলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদ হারিয়েছিলেন তিনি। সেই শহীদুল্লাহকে করা হয়েছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। এই কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান মুকুল থাকেন ঢাকায়। জেলার গৌরনদী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হলেও জেলা শহরে তার কোনো পরিচিতি নেই। এই নামে কাউকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন বরিশালের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক এক নেতা বলেন, দুঃসময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তাদের অবজ্ঞা করে ওই সময়ে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং দল এড়িয়ে চলেছেন তাদের হাতে দায়িত্ব ও নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার রেওয়াজ চালু হলো। এটা আন্দোলনমুখী একটা দলের জন্য শুভকর নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর