বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ট্যাক্সের বোঝা বাড়ছে সিলেটে

আয় বাড়াতে নতুন সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশনের, ক্ষুব্ধ নগরবাসী

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হোল্ডিং ট্যাক্স। নিজস্ব আয় দিয়ে সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ অনেক ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু নগরবাসী নিয়মিত ট্যাক্স আদায় না করায় অনেক সময় নগর ভবনের কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। এবার আয় বাড়াতে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ও ট্যাক্স উভয়ই বাড়ানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে জরিপ কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে। নতুন জরিপ অনুযায়ী ট্যাক্সের আওতায় আসছে আরও প্রায় সাড়ে ২০ হাজার হোল্ডিং। নতুন হোল্ডিং আর বর্ধিত ট্যাক্স মিলিয়ে সিটি করপোরেশনের আয় বাড়বে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তবে হঠাৎ করে এত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ- করোনা মহামারীতে মানুষের আয় কমেছে। এ আর্থিক সংকটকালে ট্যাক্সের বোঝা বাড়লে মানুষ বিপাকে পড়বে। সিসিকের রাজস্ব শাখা সূত্র জানিয়েছেন, দ্য মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (ট্যাক্সেশন) রুলস, ১৯৮৬ অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক ভবন, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসাবাড়ি অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট (জরিপ) করতে হবে। বর্তমানে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরের জরিপ অনুযায়ীই আদায় করা হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সিসিকের অভ্যন্তরীণ ও উন্নয়ন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ায় ২০১৮ সালে ফের জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় আড়াই বছর সময় নিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করা হয়। সিসিকসূত্র জানান, ২০০৬-০৭ অর্থবছরের জরিপ অনুযায়ী মহানগরে বাসাবাড়ির সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৮০০। এসব বাসাবাড়িই ছিল ট্যাক্সের আওতায়। আর ২০১৮ সালের নতুন জরিপ অনুসারে সিটি এলাকায় বাসাবাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৪৩০-এ। অর্থাৎ ট্যাক্স আদায়ের বাইরে রয়েছে ২০ হাজার ৬৩০টি হোল্ডিং। সিটি করপোরেশন এবার এগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় এনেছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ট্যাক্সের হারও। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে আদর্শ কর তফসিলে গৃহকর ৭ শতাংশ, করজারভেন্সি ৭ শতাংশ, আলো ও পানি কর ৩ শতাংশ এবং স্বাস্থ্যকর ৮ শতাংশ হারে মোট ২৮ শতাংশ কর দেওয়ার কথা। তবে সিসিক স্বাস্থ্যকর বাদ দিয়ে ২০ শতাংশ করারোপ করে। কিন্তু সে অনুযায়ীও আদায় হচ্ছে না হোল্ডিং ট্যাক্স। রিভিউ, মানবিক আবেদন, সুপারিশ এসব বিবেচনায় অর্ধেকের বেশি ছাড় দিয়ে সিটি করপোরেশন এক চতুর্থাংশ ট্যাক্সও আদায় করতে পারছে না। প্রতি বছর ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ কোটি টাকা ধরা হলেও ২ কোটি টাকার বেশি আদায় সম্ভব হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, প্রতি বছর ১৩ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১-২ কোটি টাকার বেশি আদায় হয় না। এখন লক্ষ্যমাত্রা ১০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ১৩ কোটি থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১৩ কোটি টাকা ঠিকই নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে কর নির্ধারণ করলে এর পরিমাণ দাঁড়াত প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। মহানগরের উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসীর উচিত নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর