বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ পাচারে সিন্ডিকেট

খুলনায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী আটক, জড়িত ওপর স্তরের কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ পাচারে সিন্ডিকেট

খুলনায় স্বাস্থ্যখাতের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে সরকারি হাসপাতালে গড়ে উঠেছে ওষুধ পাচার সিন্ডিকেট। নির্বিঘ্নে সরকারি ওষুধ পাচার করতে সিন্ডিকেট চক্র অপারেশন থিয়েটারসহ বিভিন্ন পদে পছন্দের লোক বসায়। তারা কৌশলে হাসপাতালে স্টোর থেকে ওষুধ সংগ্রহ ও রোগীর স্বজনকে দিয়ে অতিরিক্ত ওষুধ ক্রয় করে তা আবার ফার্মেসিতে বিক্রি করে। মাঝে মধ্যে নিম্ন স্তরের কর্মচারী ওষুধসহ গ্রেফতার হলেও জড়িত ওপরে থাকা কর্মকর্তারা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। জানা যায়, গতকাল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধ পাচারকালে মনিরা বেগম নামে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আটক হয়। অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে একটি ব্যাগে ওষুধ নিয়ে মনিরা হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছিল। এ সময় ডিউটিরত আনসারদের সন্দেহ হলে তারা ব্যাগ তল্লাশি করে অপারেশনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধ পায়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ওষুধ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ওষুধ পাচারে জড়িত থাকায় এই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এ ছাড়া আবু নাসের হাসপাতালের ওষুধ চুরির ঘটনায় ফার্মাসিস্ট দেবপ্রসাদ রায়, তার শ্যালক দিপংকর শানা ও হেরাজ মার্কেটের ইমা ড্রাগসের মালিক শেখ রকিবুল আবেদীনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই চক্রটি হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ চুরি করে মুজগুন্নীর রাস্তা দিয়ে হেরাজ মার্কেটে বিক্রি করতে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হয়। খুলনা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, সরকারি এসব দামী ওষুধ গরিব রোগীদের না দিয়ে বাইরে বিক্রি করা হয়। স্টোরের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী ও নার্স ওয়ার্ডবয় ভুয়া স্লিপের মাধ্যমে সরকারি ওষুধ সংগ্রহ করে। কিন্তু রোগীর স্বজনদের ওই ওষুধ সরবরাহ নেই বলে বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য করে। এ ছাড়া ওটিতে রোগী নেওয়ার আগেই স্বজনদের ধরিয়ে দেওয়া হয় ওষুধের লম্বা তালিকা। ওই ওষুধ না আনলে অপারেশন হয় না। আবার অপারেশন থিয়েটার থেকে ওষুধ পাচার হয় ফার্মেসিতে। জবাবদিহিতা না থাকায় একই ঘটনা বার বার ঘটছে। এদিকে সরকারি হাসপাতালের বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ কম দামে কিনে প্রাইভেট ক্লিনিকে চুক্তিভিত্তিক অপারেশনের কাজে লাগানো হয়। গ্রামাঞ্চলে ক্লিনিক সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলোতেও ওইসব ওষুধ পাওয়া যায়। জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিয়েই রোস্টারের মাধ্যমে একই ব্যক্তি ওটিতে ডিউটি করেন বছরের পর বছর। ২/১ মাসের জন্য অন্য জায়গায় কেউ গেলেও আবার যথাস্থানে পদায়ন করা হয় রোস্টার বাণিজ্যের মাধ্যমে। ওষুধ চুরি বিষয়ে খুমেক হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, মনিরা বেগম আউটসোর্সিং কর্মচারী। তাই এ বিষয়ে ঠিকাদারের নিকট কৈফিয়ত চাওয়া হবে। এ ছাড়া ওষুধ পাচারের বিষয়ে আরও তদন্ত করার জন্য পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর