বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ৬৪ জেলায় অভিযান

ইউপি নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে আইজিপির নির্দেশনা

আলাউদ্দিন আরিফ

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপসহ পরবর্তী নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে এই অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশের সব ইউনিটের প্রধানদের ডেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে পুলিশ সবসময় জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করে। তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে রক্তপাত ও সহিংসতা এড়াতে সব ইউনিট প্রধানদের ডেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইজিপি মহোদয় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।’

পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইজিপির নির্দেশনার পর দেশের ৬৪ জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে একযোগে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। টানা সাত দিন অভিযান চলমান থাকবে। প্রয়োজনে সময়সীমা বাড়ানো হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনা ও কম্বিং অপারেশন করার বিষয়েও বলা হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, সিলেট, কুমিল্লা ও কক্সবাজারে অস্ত্র চোরাচালানের রুটগুলোতে বিশেষ নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমরা সবসময় বিশেষ তৎপর আছি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে বিশেষ অভিযান চালানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আছে সেই এলাকাগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা অর্ভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে মেহেরপুরের এসপি রাফিউল আলম বলেন, ‘আইজিপি মহোদয় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা অভিযান শুরু করেছি।

কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা আগ্নেয়াস্ত্র বা অস্ত্র চোরাকারবারি কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’ 

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বাংলাদেশে অধিকাংশ অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের যেসব রুট চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে রয়েছে যশোরের বেনাপোল ও চৌগাছা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, সাতক্ষীরার শাঁকরা ও ভোমরা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোলাহাট, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, সিলেটের ডাউকি, কুমিল্লার সীমান্তবর্তী এলাকা, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া। এসব জেলার পুলিশ সুপারদের অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে অস্ত্রের চোরাচালান বন্ধের বিষয়ে বলা হয়েছে।

চলতি বছর ইউপি নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় অবাধে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এসব গোলাগুলির ঘটনায় নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, কক্সবাজার, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছেন। ইউপি নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ ও নির্বাচনের আগে এবং পরেও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অবৈধ অস্ত্রের উৎস চিহ্নিত করে সরবরাহকারী, ক্রেতা, বিক্রেতাসহ সব কারবারীকে আইনের আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের একটি ব্যবহার আমরা দেখে আসছি। সাধারণত নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে অস্ত্র উদ্ধারের প্রতিযোগিতা থাকা উচিত যে, কোন ইউনিট কত বেশি অস্ত্র উদ্ধার করতে পারে। আর অস্ত্র চোরাচালানের জন্য যেসব রুট রয়েছে সেখানে গোপনে ও প্রকাশ্যে নজরদারি বাড়াতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিবিড় তদারক করা জরুরি, যাতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা নিতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর