বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

র‌্যাবের পোশাকে শতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

এসএসসি পাস করে বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি নেন আবদুর রাকিব ওরফে খোকন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে বিজিবির ল্যান্স নায়েক পরিচয় দিয়ে প্রেষণে র‌্যাবে বদলি হয়েছে বলে প্রচার করত। র‌্যাবের ইউনিফর্ম পরেই বিভিন্ন আলিশান বাড়ি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অফিসের সামনে গিয়ে তৈরি করত টিকটক ভিডিও। কয়েক লাখ ফলোয়ার বানিয়ে খোকন থেকে হয়ে ওঠে টিকটক রাজ। একইসঙ্গে টিকটকে যেসব মেয়েকে ধনাঢ্য মনে করত তেমন শতাধিক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বিশেষ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্লাকমেলিংয়ের ফাঁদে হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে প্রতারক টিকটক রাজকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। রাজের কাছ থেকে র‌্যাবের ইউনিফর্ম, মোবাইল ফোন, সিম ও বাঁশি জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক সেলিব্রিটি বানানোর নামে বিভিন্ন দেশে নারী পাচার চক্রের মূলহোতা আশরাফুল মন্ডল ওরফে বস রাফি, ম্যাডাম সাহিদা ও টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী অনিকসহ বেশ কয়েকটি নারী পাচার চক্রের ৬৬ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার র‌্যাব-২ ও ৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে টিকটকার রাজকে গ্রেফতার করা হয়। টিকটকে নিজেকে র‌্যাবের সদস্য পরিচয়ে শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি, ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল ও অর্থ আত্মসাতের বহু অভিযোগ রয়েছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, টিকটকার রাজ পেশায় বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু র‌্যাবের ইউনিফর্ম পরে নিজেকে র‌্যাব-৫ এ কর্মরত হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিল। গত দুই বছর ধরে সে টিকটক, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে র‌্যাবের পরিচয় দিত। টিকটকে রাজের প্রায় ২ মিলিয়নের অধিক ভিউ ও প্রায় দেড় মিলিয়ন ফলোওয়ার রয়েছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নিজেকে উচ্চবিত্ত পরিচয় দিত। এ পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন আলিশান বাড়ির সামনে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিসের সামনে গিয়ে ভিডিও তৈরি করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজ টিকটকে বিভিন্ন মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামি অলংকার পরিধান করত ও যেসব মেয়ের অবস্থা ভালো তাদের টার্গেট করত। এরপর তাদের বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে হার, অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করত। টিকটক রাজের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর গত দেড় বছরে র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনটি বিয়ে করেছে। যদিও পরে তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়।

সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করত। পরবর্তীতে ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নিত। সম্প্রতি টিকটকার রাজ র‌্যাব-৫ থেকে ঢাকায় র‌্যাব-২-এ বদলি হয়েছে এই বলে সে ঢাকায় আসে। ঢাকায় এসে সে আরও ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা করে মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করতে চেয়েছিল। তবে এর আগেই এই প্রতারক রাজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর