শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাগরের নোনা জলে রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নান

বাগেরহাট ও পটুয়াখালী প্রতিনিধি

সাগরের নোনা জলে রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নান

সাগরের নোনা জলে রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নান শেষ হয়েছে। সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় আলোরকোলে গতকাল ভোরে সাগরের জোয়ারের নোনা জলে রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনব্যাপী রাস উৎসব। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় রাসপূজা। অন্যদিকে পটুয়াখালীর সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রাসপূজা। জাগতিক পাপ মোচনের আশায় কৃষ্ণ নাম ধ্বনিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী-ভক্তের সমাগম হয়। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় করা হয় বিশেষ প্রার্থনা। সুন্দরবনে রাসপূর্ণিমার রাসপূজা ও রাস পুণ্যস্নানে অংশ নেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। এবার সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে ২০০ বছরের পুরনো ‘রাসমেলা’ হয়নি। এ ছাড়া হিন্দু ছাড়া রাস পুণ্যস্নান দেখতে অন্য ধর্মের কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রাসপূজা। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবার শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বলীদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতি বছর নভেম্বরে রাসপূর্ণিমা তিথিতে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ নানা প্রান্ত থেকে ২০-৩০ হাজার পুণ্যার্থী ও নানা ধর্মবর্ণের দেশি-বিদেশি পর্যটক আলোরকোলে রাস উৎসবে অংশ নেন। এবার হিন্দু পুণ্যার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় লোকসমাগম অর্ধেকে নেমে আসে।

কৃষ্ণ নামে মুখরিত কুয়াকাটা : গতকাল ঊষালগ্নে রাসস্নান শুরু হয়ে সকাল ৯টায় শেষ হয়। এ উৎসব ঘিরে দুই দিন আগে থেকেই কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেন পুণ্যার্থী-ভক্তরা। সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আগত পুণ্যার্থী-ভক্তরা রাসপূর্ণিমা তিথিতে মধ্যরাতে নামসংকীর্তন, পূজার্চনা, নামকীর্তন ও পদাবলিকীর্তন শেষে ঊষালগ্নে করেছেন পুণ্যস্নান। বুধবার বিকালে অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল ঊষালগ্নে ভক্তদের হরে কৃষ্ণ হরে রাম ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে কুয়াকাটা।

অনেকে বিভিন্ন রোগ-শোকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মানত করা পূজার্চনা সম্পন্নে পুরোহিত নিয়ে আসেন সাগরসৈকতে। মোমবাতি প্রজ্বালন, ধান-দূর্বা ও বেলপাতা সমুদ্রজলে অর্পণ করে স্নান সম্পন্ন করেন তারা। স্নান শেষে পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। কেউ কেউ পাঠ করেন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাসমেলায় আগত পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও নিরাপত্তা দিতে আনসার-ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেন পর্যটননগরী কুয়াকাটা। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ও চেকপোস্টের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের নজর রাখা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেডিকেল টিম রাখা হয়। সার্বক্ষণিক ছিল ডুবুরি দল।

কুয়াকাটা রাসপূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজলবরণ দাস বলেন, ‘ঊষালগ্নে সাগরসৈকত কুয়াকাটার বিচে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের আশায় স্নানে পুণ্যার্থী ও পর্যটকের ঢল নামে। সি বিচে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মানত করা পূজা দিয়েছেন পুরোহিত এনে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে পালন করা হবে এ উৎসব।’

মহিপুর থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, কড়া নিরাপত্তা আর সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্য দিয়ে রাস উৎসবের পূজা ও স্নান নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর