রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষক পর্যায়ে বিনাধান-২০ চাষে ব্যাপক সাফল্য

রাহাত খান, বরিশাল

গবেষণায় সাফল্যের পর এবার পরীক্ষামূলকভাবে কৃষক পর্যায়ে জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল বিনাধান-২০ চাষ করে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল। এই প্রথম নতুন উদ্ভাবিত ধান চাষ করে অধিক ফলন পাওয়ায় এই ধানে উৎসাহ বাড়ছে সাধারণ কৃষকের। জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ এই চালে রয়েছে অধিক পুষ্টিগুণ। জেলার ধান চাষিদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল এই ধান আবাদের জন্য বিনামূল্যে এই বীজ দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে বরিশাল বিনা উপকেন্দ্র। আগামীতে বিনা-২০ ধান জেলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। বরিশাল অঞ্চলে বছরের ৯ মাসে দুটি ফসল ফলিয়ে বর্ষার সময়ে বাকি ৩ মাস অনাবাদী পড়ে থাকত কৃষকের জমি। দীর্ঘ ৫ বছরের গবেষণায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বর্ষার সময়ে রোপণযোগ্য জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ উচ্চফলনশীল বিনাধান-২০ উদ্ভাবন করে। গত কয়েক বছর গবেষণার পর এবার বরিশালের গৌরনদীর খাঞ্জাপুরে কৃষক পর্যায়ে ২০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ধান চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। উৎপাদিত এই ধান পুষ্টিগুণে ভরা। জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ ধান হওয়ায় মানবদেহের জন্য বিশেষ করে গর্ভবতীদের জন্য উপকারী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল উপ-কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল উপ-কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ছয়েমা খাতুন বলেন, এ বছর প্রথম বিনাধান-২০ কৃষকের জমিতে চাষ করে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ থেকে ৫ টন ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটির চাহিদা অনুযায়ী স্বল্পজীবনকালের এই ধান চাষ করে অল্প দিনে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারবে। এতে কৃষক লাভবান হবে এবং অন্যান্য ফসল আগাম আবাদ করতে পারবেন। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের জাত কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল উপ-কেন্দ্র বিনামূল্যে বীজ দিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে তিনি জানান। বর্ষা মৌসুমে অনাবাদী জমিতে অসময়ে বিনাধান-২০ বপন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফসল ঘরে তুলতে পেরে খুশি পরীক্ষামূলক চাষি গৌরনদীর খানজাপুর ইউনিয়নের জসিম মৃধা। আরেক কৃষক মো. অলিল মৃধা জানান, বিনাধান-২০ ফসল ১২০ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। বিনাধান-২০ আগে কর্তন হওয়ায় ওই সময়ে আগাম সরিষাসহ রবিশস্য চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। এ কারণে নতুন এই ধানে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. তাওফিকুল আলম বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষি বিভাগ স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ জাতের ধান আবাদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। বিনাধান-২০ স্বল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। এর বিশেষ গুণ জিংক ও আয়রনসমৃদ্ধ। জীবনকাল কম হওয়ায় অন্য ফসল আগাম চাষ করা যায়। এই জাতের ধানের প্রসার ঘটলে আগামী দিনে খাদ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের চাল দিয়ে মুড়ি, চিঁড়া, খৈ এবং পিঠা তৈরির গুঁড়া ভালো হয় বলে জানান বরিশাল বিভাগের প্রধান কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর