সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদ্রোহী ঢেউয়ে টালমাটাল নৌকা

ইউপি নির্বাচন সিলেট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সিলেট বিভাগে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বেশির ভাগ ইউনিয়নে নৌকা ডুবিয়েছেন বিদ্রোহীরা। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী হওয়ায় এসব প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হলেও প্রভাব পড়েনি নির্বাচনে। কোনো কোনো ইউপিতে পাস করেছেন বিদ্রোহীরা, আবার কোনো ইউপিতে নৌকাকে সঙ্গে নিয়ে ডুবেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও থামছে না বিদ্রোহীদের আস্ফালন। তাই বিদ্রোহীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে ক্ষমতাসীন দলে। আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে বেশির ভাগ ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ‘বিদ্রোহের’ ঢেউয়ে নৌকার অবস্থা টালমাটাল। তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো প্রার্থীকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। বহিষ্কারের পাশাপাশি তাদের জন্য দলের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের ৪৪টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গ-গোলের জন্য একটির ফলাফল স্থগিত করা হয়। বাকিগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ১৯টিতে। আর দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ১০টিতে। বাকি ১৪টি ইউপির অধিকাংশটিতেই নৌকার পরাজয় ঘটেছে বিদ্রোহীদের জন্য। আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের ৭৭টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১৬টি, সুনামগঞ্জের ১৭টি, মৌলভীবাজারের ২৩টি ও হবিগঞ্জ জেলার ২১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই ৭৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ৮৪ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪ জন, সুনামগঞ্জে ২৮ জন, মৌলভীবাজারে ২৪ জন ও হবিগঞ্জে ১৮ জন বিদ্রোহী লড়ছেন। সিলেট জেলার মধ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পাঁচ ইউপির সব কটিতে একজন করে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এর মধ্যে সিলামে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শাহ ওলিদুর রহমানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন মো. মুজিবুর রহমান। জালালপুরে ওয়েস আহমদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ হক বুস্তান। মোগলাবাজারে সদরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ ফখরুল ইসলাম শাইস্তা। দাউদপুরে আতিকুল হকের বিপক্ষে মাঠে আছেন নুরুল ইসলাম আলম ও লালাবাজারে নৌকার তোয়াজিদুল ইসলামের অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মুহিত। জৈন্তাপুর উপজেলার পাঁচটি ইউপির মধ্যে দুটিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। জৈন্তাপুর সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আবদুর রাজ্জাক রাজা। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আবদুল কাইয়ুম। চিকনাগুলে নৌকার প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আমিনুর রশিদ। গোয়াইনঘাট উপজেলার ছয় ইউনিয়নের সব কটিতে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। নন্দীরগাঁও ইউনিয়নে এবারও নৌকা পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও হীরক দে। রুস্তমপুরে হেলাল উদ্দিনের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিতে বিদ্রোহ করে প্রার্থী হয়েছেন এম এ মতিন। লেঙ্গুড়ায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মুজিবুর রহমান মুজিব, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন গোলাম কিবরিয়া রাসেল। তোয়াকুলে নৌকা প্রতীকে মাঠে লোকমান হোসেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী সামছুদ্দিন আহমদ। ফতেহপুরে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন নাজিম উদ্দিন। তার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ চৌধুরী। ডৌবাড়ীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুভাষ দাস। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আগেরবার নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম নিজাম উদ্দিন।

এদিকে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী হয়েছিলেন তাদের মতো তৃতীয় ধাপের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা আদর্শিক রাজনীতি করেন তারা সব সময় দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলেন। যাদের কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বড় তাদের আওয়ামী লীগ করার প্রয়োজন নেই। গতবার যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের কেউই এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। আর এবার যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের জন্য দলের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর