সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

পক্ষপাতিত্বমূলক রিপোর্টের কারণেই ধর্ষকরা খালাস পায় : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাই কোর্ট বলেছে, পক্ষপাতিত্বমূলক মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়ার কারণেই ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে ধর্ষকরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক নারীর মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গতকাল হাজির হওয়ায় দুই চিকিৎসকের উদ্দেশে এসব মন্তব্য করে আদালত। বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টে বেঞ্চে হাজির হন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. মোমিন চৌধুরী ও ডা. নাদিরা বেগম। পরে দুই চিকিৎসককে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। তবে ওই নারীর শরীরে ‘জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি’ মর্মে মেডিকেল রিপোর্ট দেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. মোমিন চৌধুরী ও ডা. নাদিরা বেগম।

একজন নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও কেন তার শরীরে কোনো চিহ্ন পেলেন না, সেই ব্যাখ্যা দিতে দুই চিকিৎসক হাই কোর্টের তলবে হাজির হন। পরে তারা রিপোর্টের পক্ষে মৌখিক ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু আদালত ওই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে আদেশ দিতে চান।  তখনই চিকিৎসকরা ক্ষমা চান আদালতে।  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চিকিৎসকদের ক্ষমা করার কথা আদালতে বলেন। তখন হাই কোর্ট বলে, আমরা ক্ষমা করতে বসিনি, বিচার করতে বসেছি। এ ধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক রিপোর্ট দেওয়ার কারণেই ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধর্ষকরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের উচিত ধর্ষণের ঘটনায় গুরুত্ব সহকারে ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা, যাতে ধর্ষকরা কোনোভাবেই পার পেয়ে না যায়। এরপর হাইকোর্ট ওই দুই চিকিৎসককে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করতে নির্দেশ দেয়।

চলতি বছরের ৬ মার্চ হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বান্ধবীর বিয়েতে যান ওই নারী। গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয়। সেখানে গিয়ে বখাটেদের উত্যক্তের শিকার হন তিনি। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় ১২ মার্চ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। এ ঘটনায় ১৯ মার্চ লাখাই থানায় মামলা দায়ের করেন ধর্ষণের শিকার নারী। ওই মামলায় মো. শিপন মিয়া (২২), মো. পারভেজ (২০), মো. হুমায়ুন মিয়া (২০), মো. শাহজাহান (২২), আফিয়া আক্তার (৩০), দেলোয়ার হোসেন দিলু (৪৫) ও রাবিয়া খাতুনকে (৩৫) আসামি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম চার আসামি ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। অন্য আসামিরা এ কাজে সহায়তা করেন।

এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৩)/৩০ ধারায় মামলা করা হয়। এ মামলায় হাই কোর্টে জামিন চান গ্রেফতার আসামি রাবিয়া খাতুন। ওই জামিনের আবেদনের শুনানিকালে ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্টে চিকিৎসকদের দেওয়া মতামতের বিষয়টি নজরে আসে। এরপরই হাই কোর্ট দুই চিকিৎসককে তলব করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর