বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উড়াল সড়কে বদলে যাবে হাওর

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

উড়াল সড়কে বদলে যাবে হাওর

হাওরের বুক চিরে তৈরি হবে সড়ক। হাওরের ঢেউয়ের ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি। পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জবাসীকে এমন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এম এ মান্নান। এবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের সঙ্গে নেত্রকোনার যোগাযোগ ব্যবস্থায় যোগ হতে যাচ্ছে নতুন মাত্রা। হাওরের মধ্য দিয়ে যাবে উড়াল সড়ক। ১১ কিলোমিটরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক বদলে দেবে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ, পর্যটন ও অর্থনৈতিক অবস্থা। ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের সভায় পাস হয়েছে। সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা পাশাপাশি হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দুই জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। ফলে সড়কপথে সিলেট থেকে ভৈরব হয়ে যেতে হয় নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে। পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর নেত্রকোনার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন এম এ মান্নান। হাওরের ভিতর দিয়ে উড়াল সড়ক নির্মাণের স্বপ্ন দেখান তিনি।

 স্থানীয়রা বলছেন, উড়াল সড়কটি হলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, কৃষিপ্রধান দুই জেলার অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে। কৃষক ও খামারিরা তাদের উৎপাদিত মৎস্য ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন। উড়াল সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুই জেলার হাওরপাড়ের পাঁচটি উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিক সুফল পাবে। বদলে যাবে এখানকার সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবেশ। এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার অল সিজন উপজেলা সড়ক এবং ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন করা হবে। ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সাবমার্সিবল উপজেলা সড়ক, ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সাবমার্সিবল ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক, ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার উড়াল সড়ক উন্নয়ন; এবং ৫৭টি ব্রিজ ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত উড়াল সড়কে যান চলাচল সম্ভব হবে। প্রতি বছর বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাওর এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। প্রকল্প পরিকল্পনায় জানা গেছে, পর্যটকদের বিস্তীর্ণ হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দিতে উড়াল সড়কের দুই পাশে অন্তত ছয় থেকে সাতটি দ্বিতল টাওয়ারও নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা পাশাপাশি হলেও সড়কপথে পরস্পর যোগাযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে। এ দুই জেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। উড়াল সড়ক এ দুই জেলার সংযোগ স্থাপন করবে। এতে দুই জেলার মানুষের জীবনমানও উন্নত হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন ছিল। সড়ক ও সেতু বিভাগ আপত্তিও দিয়েছিল। অবশেষে এলজিইডি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর