শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বমানের ফিলিং স্টেশন এবার দেশেই

মডেল ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানি ছাড়াও থাকবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, ভিআইপি রেস্টুরেন্ট

জিন্নাতুন নূর

পশ্চিমা মুভিগুলোতে সুন্দর ছিমছাম আধুনিক সুবিধা সংবলিত ফিলিং স্টেশনগুলো দেখেছেন নিশ্চয়ই পাঠক। লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে জ্বালানি সংগ্রহের পাশাপাশি একজন সেবাগ্রহীতা রেস্টুরেন্টে যেমন খেতে পারেন একইসঙ্গে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রীও কিনতে পারেন। এই স্টেশন দেখে আফসোস হতেই পারে। ইস বাংলাদেশে যদি এমন ফিলিং স্টেশন থাকত। সেই আফসোস আর করতে হবে না। এবার বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের ছয়টি মডেল ফিলিং স্টেশন। জ্বালানি ছাড়াও এসব স্টেশনে মিলবে আধুনিক টয়লেট, ভিআইপি রেস্টুরেন্ট, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, কিডস জোন, চালকদের ডরমেটরি ও পৃথক ক্যান্টিন, এটিএম বুথ, স্যুভেনির শপ এবং মেডিসিন কর্নার ইত্যাদি। সরকারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল), মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এমপিএল) এবং যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড (জেওসিএল) এই মডেল ফিলিং স্টেশনগুলো নির্মাণ করছে। এরই মধ্যে এসব ফিলিং স্টেশনের নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতেই ৫টি ফিলিং স্টেশনের উদ্বোধন করা হবে।  সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন একজন চালক যাতে ৬ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে গাড়ি চালান। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই এ ধরনের মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। বর্তমানে দেশে যে ফিলিং স্টেশনগুলো আছে সেগুলোর টয়লেটের অবস্থা শোচনীয়। আবার দীর্ঘ ভ্রমণে যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য এসব স্টেশনে তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই। এসব বিষয় মাথায় রেখেই এ ধরনের মডেল ফিলিং স্টেশন তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মেঘনা ওয়েল কোম্পানির (এমপিএল)-এর আওতায় চট্টগ্রামের মিরসরাই-এর মেসার্স ফারদিন মডেল ফিলিং স্টেশনটি  তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকা-পূর্বাচল সড়কে এমপিএল-এর আরেকটি মডেল ফিলিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের শেষের দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। এমপিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ-আল-খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মিরসরাই-এ আমাদের মডেল ফিলিং স্টেশনের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ক্যানোপি বসে গিয়েছে। এখানে পুরুষ, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩টি আলাদা টয়লেট থাকছে। এ ছাড়াও থাকবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। চালকদের বিশ্রামের জন্য ডরমেটরি। চালকদের জন্য আরও থাকছে পৃথক ক্যান্টিন। এখানে আরও থাকবে ৭০টি গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা। পরিবার নিয়ে যারা কিছু খেতে চান তাদের জন্য থাকছে ভিআইপি রেস্টুরেন্ট। এ ছাড়া সাধারণ বাস যাত্রীদের জন্যও থাকবে আলাদা রেস্টুরেন্ট।

এর সঙ্গে থাকবে ফাস্ট ফুড এবং এটিএম ব্যাংকিং সুবিধা। আরও থাকবে স্যুভেনির শপ। এ ছাড়াও থাকবে মেডিসিন কর্নার। আর জ্বালানি হিসেবে এসব ফিলিং স্টেশনে জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াও, এলপিজি এবং গাড়ির ব্যাটারি চার্জিং সুবিধা থাকছে। অর্থাৎ বিদেশের ফিলিং স্টেশনগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের যে সব সুবিধাদি থাকে আমাদের মডেল ফিলিং স্টেশনগুলোতেও সেই সুবিধাদি থাকবে। এটি ২.২৫ একর জমিতে তৈরি করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিন অথবা এ বছর ১৬ ডিসেম্বর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্টেশনটি উদ্বোধন করা হবে।

যমুনা ওয়েল কোম্পানির (জেওসিএল)-এর আওতায় আরও ২টি মডেল ফিলিং স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেসার্স ডিএবি ফিলিং স্টেশন ও ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে মেসার্স নাবিল ফিলিং স্টেশন স্থাপনের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এর অবকাঠামো নির্মাণ, ডিসপেন্সিং ইউনিট, ক্যানোপি ও অন্যান্য পূর্তকাজের অগ্রগতি ইতিবাচক।

জেওসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আনচারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দুটো ফিলিং স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আশা করছি আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর নির্ধারিত সময়ে ফিলিং স্টেশনগুলো উদ্বোধন করতে পারব। একটি মডেল ফিলিং স্টেশনে সাধারণত যেসব সুবিধাদি পাওয়া যায় এই ২টি স্টেশনে সেগুলো পাওয়া যাবে। এখানে যেমন উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট থাকবে একইসঙ্গে থাকবে আধুনিক টয়লেট এবং কিডস জোন। 

বর্তমানে পদ্মা ওয়েল কোম্পানির (পিওসিএল) আওতায় আরও দুটি মডেল ফিলিং স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে সিলেট মহাসড়কে তৈরি হচ্ছে হাজী মোহাম্মদ আলী মডেল ফিলিং স্টেশন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ভালো। এরই মধ্যে এর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এই মডেল ফিলিং স্টেশনটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া পিওসিএলের আওতায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আরও একটি ফিলিং স্টেশনের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর