শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সতর্ক আওয়ামী লীগ, পর্যবেক্ষণে বিএনপির সার্বিক কর্মকাণ্ড

সম্পাদকমণ্ডলীয় সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যেকোনো আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। ২৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে যেন কেউ কোনো ‘অস্থিতিশীল’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক দলটি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদসহ অন্যরা।

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দেন তিনজন নেতা। তাদের ভাষ্য, কিছু জায়গায় অজনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছে। ওইসব প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গিয়ে দলকে নানা বদনামের ভাগীদার হতে হচ্ছে। আর তৃণমূলে আমাদের সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত। একই সঙ্গে সভায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে  বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় নেতারা বলেন, দলের   সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন ও যারা তাদের মদদ দিচ্ছেন তাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রথম শোকজ এবং পরে বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। কিন্তু অনেক জায়গায় স্থানীয়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যা তারা করতে পারেন না।

বৈঠকে দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে  সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিহত করবে। দেশবিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত মোকাবিলা করতে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থান নিয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, কেউ যেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে আমরা সে বিষয়ে সতর্ক থাকব। একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা এ বিষয়ে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বিক যোগাযোগ রাখছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সভায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুটিকে বিএনপি রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর চেষ্টা করছে বলে মত দেন একাধিক নেতা। তারা বলেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য একটি ইস্যু চাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রাধান্য দিলে বিএনপি আইনি পথে হাঁটত, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইত। তারা যেহেতু আন্দোলনের পথে হাঁটছে, আওয়ামী লীগকেও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য জানান, বিএনপি যেন এ ইস্যুতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অন্দোলনের প্রস্তুতি না নিতে পারে সে জন্য বিএনপি নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার বিষয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত যেন রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি করতে না পারে সেদিকও খেয়াল রাখতে বলা হয়।

একটি সূত্র জানায়, সভায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়েও কথা হয়। বিআরটিসির মতো বেসরকারি বাস মালিকদেরও শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া উচিত বলে মত দেন নেতারা। বাস মালিকদের অর্ধেক ভাড়া আদায়ের আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকম লীর সভার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ছাত্রছাত্রীদের বিআরটিসি বাসে ৫০ শতাংশ ভাড়া নির্ধারণ করায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সম্পাদকম লীর সভায় ধন্যবাদ জানানো হয়। এ ছাড়া বাস মালিক-শ্রমিকদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক ভাড়া রাখার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে সভায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর জানান, সভায় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের কর্মসূচি নিয়ে আলাপ হয়। তিনি জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। ওইদিন অনেক কর্মসূচি থাকবে। তাই ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন (ধানমন্ডি ৩২) পর্যন্ত র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে এবং ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন হবে বলে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি সাপেক্ষে এ কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর