বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চাকরি হারালেন পুরো বেতনের দাবিতে সরব বিমানের পাইলট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামালের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে তাকে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি জানানো হয়। ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বিমানের বোয়িং ৭৮৭ এর পাইলট। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। করোনা মহামারীর মধ্যে বিমানের পাইলটদের বেতন কেটে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে বেতন কাটার হার কিছুটা কমানো হলেও পুরোপুরি সমন্বয় করা হয়নি। এ নিয়ে সরব ছিলেন বিমানের পাইলটরা। সেখানে বাপা সভাপতি মাহবুবুর রহমানও ভূমিকা রেখেছিলেন। পাইলটদের বেতন পুরোপুরি সমন্বয়ের দাবিতে এর মধ্যে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে ফ্লাইট না চালানোর কর্মসূচিও নিয়েছিলেন তারা। তাতে কয়েক দিন ঢাকা থেকে বিমানের ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়।

গত ২০ নভেম্বর বিমান আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিমান পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, যাদের কারণে সম্প্রতি বিমানের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে, তাদের খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বিমানের বিলম্ব হলে বা সেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটলে দায়ী ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এরপর গত ২৪ নভেম্বর বিমানের পর্ষদ সভায় বিমান পরিচালনায় ‘বাধা সৃষ্টিকারী’ ককপিট ক্রুদের (স্পেশাল পে) বিষয়ে ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক চাকরি থেকে অপসারণ, অবসায়ন ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের’ জন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২৯ নভেম্বর ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

চাকরিচ্যুতির ওই চিঠিতে বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশন অব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের আর্টিক্যাল ৫৯(বি)-এর ক্ষমতাবলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাকরিচ্যুতির এই আদেশ দিয়েছেন। চাকরিজীবনের কোনো পাওনা থাকলে মাহবুবুর রহমানকে বিমানের হিসাব শাখা থেকে তা বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।

এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কোনো প্রেসিডেন্টকে টার্মিনেট করিনি। আমরা বিমানের একজন ক্যাপ্টেনকে টার্মিনেট করেছি।’ তিনি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের ৫ মে এক প্রশাসনিক আদেশে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পাইলটদের বেতন কমানো হয়। এর মধ্যে পাইলটদের বেতন কমে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বন্ধ হয় ওভারসিস অ্যালাউন্স, যা স্থায়ী বেতনের অংশ। ফলে মোট বেতন কমার হার দাঁড়িয়েছিল ৫৭ থেকে ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া বন্ধ হয় ওভারটাইম, প্রোডাকটিভিটি অ্যালাউন্স ও ফ্লাইং অ্যালাউন্স। এরপর চলতি বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিমান বেতন কর্তনের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে আনে। এরপর গত ১৩ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জারি করা এক আদেশে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় করে আগের নিয়মে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তবে পাইলটদের বেতন-ভাতা কর্তন অব্যাহত থাকে।

বাপার পাইলটরা বলছেন, তাদের মোট বেতনের ৪৮ শতাংশ সমন্বয় করা বাকি আছে। গত তিন মাসে বিমানের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় করা হয়েছে, কিন্তু পাইলটদের বেতনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা সমন্বয়ে বিমানের পাইলটরা দাবি জানিয়ে আসছেন। বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তুষ্ট পাইলটরা গত ২৫ অক্টোবর থেকে তাদের চুক্তি অনুযায়ী কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করা থেকে বিরত থাকেন। তাতে বিমানের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়, দুর্ভোগে পড়েন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীরা। পাইলটদের সঙ্গে সে সময় বিমান কর্তৃপক্ষের দফায় দফায় আলোচনা হয়। সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তাতে পাইলটদের নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন মাহবুব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর