চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে ইনসিনারেটর মেশিন আদমানিতে নির্ধারিত শুল্ক ও কর মওকুফের আবেদন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি প্রদান করেনি। এ নিয়ে পার হয় দীর্ঘ সময়। অবশেষে চসিক নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা কর পরিশোধ করে মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে মেডিকেল ইনসিনারেটর মেশিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি মাসেই এটি স্থাপন করার কথা। মেডিকেল বর্জ্যরে মধ্যে অন্যতম হলো- ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিউমার, ওষুধের শিশি, রক্তের ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভৃতি। জানা যায়, চসিক জাইকার কারিগরি সহযোগিতা প্রকল্প ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন ঢাকা নর্থ সিটি, ঢাকা সাউথ সিটি অ্যান্ড চিটাগাং সিটি করপোরেশন’ এর আওতায় মেডিকেল ইনসিনারেটর আমদানির উদ্যোগ নেয়। প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ইনসিনারেটর মেশিনটি আমদানি করা হবে জাপান থেকে। তবে জাইকার সঙ্গে চসিকের শর্ত ছিল, আমদানিতে শুল্ক ও কর চসিককে আদায় করতে হবে। তাই চসিক সরকার টু সরকার (জি টু জি) পদ্ধতিতে শুল্ক ও করমুক্ত আমদানি করতে ২৭ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। চিঠির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন শাখার এক চিঠিতে বলা হয় ‘বিষয়টি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এখতিয়ারাধীন। বিধায় শুল্ক ও কর মওকুফ করার সংশ্লিষ্ট বিষয়টি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বিভাগটি উপযুক্ত বিষয়ে শুল্ক ও কর মওকুফের বিষয়ে বিধিগত সুযোগ নেই মর্মে অবহিত করে।’ এরপর চসিক নিজস্ব অর্থে কর আদায় করে মেশিনটি আনার উদ্যোগ নেয়। চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক বলেন, মেডিকেল বর্জ্য পৃথকভাবে ধ্বংস করতে জাইকার একটি প্রকল্পের অধীনে ইনসিনারেটর ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের শর্ত মতে, মেশিনটি আমদানিতে শুল্ক ও কর চসিক বহন করবে। তাই জি টু জি পদ্ধতিতে শুল্ক ও কর মওকুফের আবেদন করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় কর মওকুফে সম্মতি দেয়নি। তাই চসিক নিজস্ব অর্থে আনার উদ্যোগ নেয়। মেশিনটি স্থাপনে হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাশে একটি জায়গায় প্রয়োজনীয় কাজ চলছে। এ মাসেই এটি বসানো হবে। এটি মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংস করার সর্বশেষ অত্যাধুনিক পদ্ধতি। অভিযোগ আছে, চসিকের সঙ্গে সেবা সংস্থা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণের চুক্তি আছে। কিন্তু সংস্থাটি মেডিকেল ও সাধারণ বর্জ্য পৃথক না করে বর্জ্যাগারে নিয়ে সেগুলো আবার নিলামে বিক্রি করে। ফলে অপরিশোধিত মেডিকেল বর্জ্য আবারও দূষিত অবস্থায়ই ফিরে আসে। এর প্রেক্ষিতে চসিক পৃথকভাবে মেডিকেল বর্জ্য অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করে। জানা যায়, মেডিকেল বর্জ্যগুলো অত্যন্ত সংক্রামক ও বিপজ্জনক। এগুলো মারাত্মক রোগসমূহের জীবাণু বহন করে। এর মধ্যে আছে হেপাটাইটিস বি, সি এবং এইচআইভি/এইডস ইত্যাদি। মেডিকেল বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে সেটি সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে মিশে সম্পূর্ণ বর্জ্যকেই বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।