সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন বছরের প্রকল্প ১০ বছরে

খরচ বাড়ছে ২০৯ শতাংশ, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া গৃহীত হচ্ছে প্রকল্প, বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়, অপচয় হচ্ছে সরকারি টাকা, উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। কিন্তু সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া কীভাবে প্রকল্প অনুমোদিত হচ্ছে সে প্রশ্ন উঠেছে সংসদীয় কমিটিতে। বৈঠক ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটির সভাপতি জানান, তিন বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগছে ১০ বছর। এতে প্রকল্পের খরচ বাড়ছে ২০৯ শতাংশ। সময়ক্ষেপণ হচ্ছে ২৩৩ শতাংশ। কিছু কর্মকর্তার অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং দূরদর্শিতার অভাবে বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়। বিষয়টি স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে খুব বেশি না হলেও ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নে পীড়াদায়কভাবে সময় বাড়ছে অনেক বেশি। সংসদ ভবনে গতকাল ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র বৈঠকে উপস্থাপিত গত বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, বীরেণ শিকদার, আদিবা আনজুম মিতা এমপি ও সভাপতির বিশেষ আমন্ত্রণে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ডিপিপি অনুযায়ী ফান্ড না পাওয়া, যোগ্য প্রকল্প পরিচালকের অভাব, প্রকল্পে নতুন টার্ম যুক্ত হওয়া এবং সম্ভাব্যতা যাচাই না করে প্রকল্প গ্রহণ করার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্তি সময় লাগছে। কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকার যে প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা, সে প্রকল্প বাস্তবায়নে ১০ বছর সময় লেগেছে। তিনি এ জন্য কিছু কিছু কর্মকর্তার অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং দূরদর্শিতার অভাবকে দায়ী করেন। বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা। বড় প্রকল্পগুলোতে খুব বেশি না হলেও ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বৃদ্ধির সংখ্যা অনেক বেশি।

যৌন হয়রানি রোধে নতুন আইন লাগবে কি না জানতে চায় সংসদীয় কমিটি : যৌন হয়রানি বন্ধে ২০১১ সালে হাই কোর্টের নির্দেশনার আলোকে নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইন পর্যালোচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আমন্ত্রিত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পার্লামেন্টারিয়ানস অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্যদের যৌন হয়রানি বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে একটি বৈঠক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংসদ ভবনে গতকাল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যৌন হয়রানি বন্ধে ২০১১ সালে হাই কোর্টের নির্দেশনার আলোকে নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান, শামসুল হক টুকু, গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সেলিম আলতাফ জর্জ এবং খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন বৈঠকে অংশ নেন। সভাপতির বিশেষ আমন্ত্রণে বিএপিপিডির পক্ষে সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ, আ স ম ফিরোজ, আ ফ ম রুহুল হক, হাবিবে মিল্লাত, শিরিন আক্তার, নাহিদ ইজাহার খান, আদিবা আনজুম মিতা, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, শামীমা আক্তার খানম বিশেষ আমন্ত্রণে যোগ দেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধে সচেতনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে জন্য আমরা এ বিষয়ে আরও কীভাবে কাজ করা যায় সে লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সঙ্গে একটি বৈঠক করব। অনেক সময় সহিংসতার পর গণমাধ্যমে লাশের ছবি আসছে। দেখা যায় সারি সারি লাশের ছবি। এসবের জন্য অনেকের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সে বিষয় নিয়ে করণীয় নির্ধারণেও আলোচনা হবে।

উল্লেখ্য, বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি যৌন হয়রানি বন্ধে সাত দফা নির্দেশনাসহ রায় দেয়। তাতে ইভ টিজিং, স্টকিং (অসৎ উদ্দেশ্যে উত্ত্যক্ত) করাকে যৌন হয়রানি হিসেবে বিবেচনা করে আইনের অন্তর্ভুক্ত, প্রতি থানায় পৃথক সেল গঠন করে প্রতিবেদন পেশ এবং সাইবার ক্যাফে মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈঠকে আইন ও বিচার বিভাগের সচিবসহ লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর