বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সংসদীয় কমিটিতে বিটিআরসির প্রতিবেদনে তথ্য দুই রকম

দায় চাপানো হয়েছে গ্রাহকদের ওপর

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোবাইল ফোনে কলড্রপ সমস্যা, স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা, অপারেটরদের বিভিন্ন প্যাকেজ/অফারের ধোঁকা থেকে গ্রাহকদের রক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছিল সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে কমিটির কাছে ৬৭ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন পেশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তাতে একদিকে সব কিছুর দায় চাপানো হয়েছে গ্রাহকদের ওপর। এজন্য বলা হয়েছে, স্বল্পমূল্যের ও নিম্নমানের স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে গ্রাহকরা নেটওয়ার্কের ভালো কভারেজ পাচ্ছে না। অপারেটরগুলোর গ্রাহকপ্রতি গড় আয়ও নিম্নমুখী। তবে তাদের পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। বাংলাদেশের ৮৯ শতাংশ গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা না পাওয়ার কারণ পর্যাপ্ত তরঙ্গ বরাদ্দের অভাব। পরিসংখ্যান বলছে, এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে তরঙ্গ ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে। প্রতি মিলিয়ন গ্রাহকের জন্য গ্রামীণ ফোনের বরাদ্দ ০.৫৬৫৮, রবি-০.৮২৯৬, বাংলালিঙ্ক ১.০৮০৫ ও টেলিটক ৩.৯৩১৪ মেগাহাটর্জ। এখানে ফোরজি সাইটে অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশনের ব্যবহার শ্রীলঙ্কা ও নেপালের চেয়েও কম। শ্রীলঙ্কা ও নেপাল অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করে ৩০-৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশ মাত্র ১৮ শতাংশ। এখানে ফোরজি সাইট সংখ্যাও কম কিন্তু গ্রাহকের ঘনত্ব বেশি। পরিসংখ্যান আরও বলছে, ফাইবারের পরিবর্তে মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের ফলে মোবাইল অপারেটররা কাক্সিক্ষতমানের সেবা দিতে পারছে না। সংসদ ভবনে গতকাল ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি’র ১৩তম বৈঠকে উপস্থাপিত বিটিআরসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ। কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, মো. মাহবুব-উল আলম হানিফ, মুহিবুর রহমান মানিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। 

বৈঠকে স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা, মোবাইল ফোনে কলড্রপ সমস্যা, অপারেটরদের বিভিন্ন প্যাকেজ/অফারের ধোঁকা থেকে গ্রাহকদের রক্ষার জন্য মার্চ ২০২২ থেকে বিটিআরসির নির্দেশনা কার্যকর হওয়া, রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিমধারীদের অপকর্ম থেকে সাধারণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি প্রদান, সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষমূলক কার্যক্রম প্রচার, বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং অরুচিকর পোস্ট শেয়ার বা প্রচার বন্ধে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কেও কমিটিকে অবহিত করা হয়।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের গ্রাহকরা সরকারকে ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স দিচ্ছে ৩৩.২৫ শতাংশ। যা মালয়েশিয়ার চেয়ে ৫ গুণ, থাইল্যান্ডের চেয়ে ৪ গুণ, শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৩ গুণ, নেপাল ও পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। তারপরও বিটিআরসি বলছে, গ্রাহকের সক্ষমতার অভাব, স্মার্ট সেটের ব্যবহার ও ডিজিটাল মার্কেটের পরিপক্বতার অভাব করহারের সূচক নিম্নমুখী। তাই অপারেটরদের গ্রাহকপ্রতি গড় আয়ও কম। অথচ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স কম নিয়েও অন্যসব দেশের গড় আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।

বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমান সরকারের সচেতন মনিটরিংয়ের কারণে সামাজিক মাধ্যমগুলোর রেজিস্ট্রেশনের ফলে সরকারের লোকসান কমানো গেছে। যথাযথ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কমিটি সন্তোষ প্রকাশ করে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত স্মার্ট ফোন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শুল্ক হ্রাসের ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ায় জনগণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধার আওতায় আসবে বলে বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর