বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে শাহ মখদুম

♦ ভেঙে গেছে সীমানাপ্রাচীর ♦ গরু চরান কর্মচারীরা ♦ যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর হজরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে। ভিতরে গরু চরান কর্মচারীরা। এ অবস্থায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জানা গেছে, বিমানবন্দরটির সীমানা প্রাচীরের অনেক স্থানই ভেঙে গেছে। সেখান দিয়ে অনায়াসেই ঢুকতে পারে মানুষ। বিমানবন্দরের সীমানার ভিতর চরে গরুও। আর এই গরু পালন করেন বিমানবন্দরের কর্মরতরাই।

রাজশাহী বিমানবন্দরটি পবা উপজেলার নওহাটা এলাকায়। পশ্চিম দিকে আছে দুটি সীমানা প্রাচীর। প্রথম প্রাচীরটি রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক ঘেঁষে। আরেকটি রানওয়ের পশ্চিমে। দুই প্রাচীরের মাঝে বিভিন্ন অফিস, টার্মিনাল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার। পূর্ব দিকে রানওয়ের পরে একটিই প্রাচীর। প্রাচীরগুলো বেশ পুরনো। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এ কারণে পশ্চিমের প্রথম সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ একেবারেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই দিক দিয়ে যে কেউ বিমানবন্দরে ঢুকতে পারবে। পশ্চিম দিকে কিছু অংশে একটি সীমানা প্রাচীর পার হলেই রানওয়েতে ঢোকা সম্ভব। এখানে মহাসড়কের পাশের নতুন ড্রেন ও ফুটপাথ বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরের সমানউঁচু হয়ে গেছে। প্রাচীরের কিছু অংশে নেই কাঁটাতার। তাই ফুটপাথ থেকেই যে কেউ মূল বিমানবন্দরে ঢুকতে পারবে। পূর্বদিকের সীমানা প্রাচীরের এলাকাটির নাম বাগহাটা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সীমানা প্রাচীর আর কাঁটাতারের মাঝের অংশ ফাঁকা করা হয়েছে ভিতরে ঢোকার জন্য। প্রাচীরে উঠতে ইট দিয়ে কয়েকটি জায়গা উঁচু করা হয়েছে। বিমানবন্দরের টার্মিনালের দক্ষিণ দিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টার। কোয়ার্টারগুলোর পূর্ব দিকে বিমানবন্দরের রানওয়ে। মাঝে অনেক পুরনো লোহার টিনের বেড়া। এ বেড়ায় মরিচা পড়েছে। বিভিন্ন জায়গা ভেঙে গেছে। আবার কিছু স্থানে এসব বেড়ার পাশে উঁচু করে মাটি আছে। বিমানবন্দরের কোয়ার্টারে গরু পালন করছেন দুই কর্মচারী। এদের একজন সিভিল এভিয়েশনের লাউন্স রুম এটেনডেন্স ইউসুফ আলী।

ইউসুফ জানান, ২০০৮ সাল থেকে তিনি এই কোয়ার্টারে থাকেন। দুধ খাওয়ার জন্য গরু পালন করেন। কেউ কোনো দিন বাধা দেননি। তাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গরুগুলো বিমানবন্দরের সীমানার ভিতর জঙ্গলে ছেড়ে রাখেন। ইউসুফের কোয়ার্টারের পাশের কোয়ার্টারে থাকেন ইএম শাখার পাওয়ার হাউসের সহকারী লিয়াকত আলী। ২০০০ সাল থেকে থাকেন কোয়ার্টারে। এখানে গরুও পালন করেন। ইউসুফের মতো তার গরুও ছাড়া হয় কোয়ার্টারের পাশে। তার স্ত্রী লাভলী বেগম জানান, তাদের ছয়টি গরু ছিল। কয়েকদিন আগে একটি বিক্রি করেছেন। বিমানবন্দরের ভিতরে প্রচুর ঘাস থাকায় আরও বড় পরিসরে গরুর খামার করার পরিকল্পনা আছে তার স্বামীর।

কোয়ার্টারগুলোর দক্ষিণ দিকে একটি পুকুর। সেখানে মাছ ধরছিলেন অপূর্ব নামের এক যুবক। তিনি জানালেন, প্রথম সীমানা প্রাচীরের ফাঁক দিয়ে তিনি এসেছেন। বিমানবন্দরের বিপরীতেই তার বাড়ি। পুকুরের পাশে একটি নিচু জমিতে ঘাস কাটছিলেন বায়া থেকে আসা কৃষক মো. বাজিদ। তিনিও একইভাবে ভিতরে ঢুকেছেন। মাঝে মাঝেই তিনি ঘাস কাটেন বলে জানান।

সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা খানম বলেন, ‘এগুলো তো চাইলেই আমি ঠিক করতে পারি না। এ ব্যাপারে আমি স্যারদের জানিয়েছি।’ বিমানবন্দরের কোয়ার্টারে গরু পালন এবং বাইরের মানুষ প্রবেশ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কথা বলতে পারবেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর