বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে আইসিইউতে ভর্তি ৬৭ শতাংশ করোনা রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৭৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। আবার এর মধ্যে ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ রোগীই নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। ‘রক্তের বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে মৃত্যুঝুঁকির সম্ভাব্যতা যাচাইকরণ’ শীর্ষক এ গবেষণায় ২৩৪ জন কভিড আক্রান্ত রোগীর মধ্যে জরিপ পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের গবেষকরা চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন সিভাসু উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মো. ইসমাইল খান।

 গতকাল দুপুরে সিভাসু উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সহকারী অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ, জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব, জুনিয়র কনসালট্যান্ট রাজদ্বীপ বিশ্বাস ও মৌমিতা দাশ, সিভাসুর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ত্রিদীপ দাশ, সিভাসুর মলিকুলার বায়োলজিস্ট প্রণেশ দত্ত, সিরাজুল ইসলাম ও তানভির আহমেদ নিজামী।

গবেষণায় দেখা যায়, আইসিইউতে ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে ১৫৬ জন মৃত্যুবরণ এবং ৭৮ জন সুস্থ হন। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ৭৩ শতাংশ রোগীই ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব। এর মধ্যে নারী রোগীর তুলনায় পুরুষ রোগীর মৃত্যুহার বেশি। মারা যাওয়া এ সব রোগীর মধ্যে ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৬২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী। একই সঙ্গে  এ সব রোগী কো-মরবিডিটি বা আগে থেকেই অন্যান্য জটিল (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানিসহ আরও) রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আবার একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৭৫ শতাংশ রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ২৫ শতাংশ রোগী।

গবেষণায় বলা হয়, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা ২৬ হাজার ১১০ দশমিক ৬  ঘন মিলিমিটারের বেশি হলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া, মৃত্যুবরণ করা রোগীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। যার গড় পরিমাণ ১০ দশমিক ৬ গ্রাম। আবার ৭২ শতাংশ রোগীর রক্তে অক্সিজেনের চাপ কম থাকায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

আইসিইউ রোগীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়, রক্তের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ রোগীর রক্তে সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিনের পরিমাণ ছিল ১০২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম। অথচ রক্তে এর স্বাভাবিক মাত্রা ৫ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া ৭৫ শতাংশ রোগীর রক্তে ফেরিটিনের পরিমাণ পাওয়া যায় ৯০১ দশমিক ৫ ন্যানোগ্রাম। যা স্বাভাবিকের চেয়ে অতি উচ্চমাত্রায় রয়েছে। আবার ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ রোগীর রক্তে ডি-ডাইমারের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রয়েছে। যার মাত্রা ছিল ২ দশমিক ০২ মাইক্রোগ্রাম এবং ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ রোগীর রক্তে ট্রাইপোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রয়েছে, যা মাত্র ০ দশমিক ৮১ ন্যানোগ্রাম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর