মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষোভ বাড়ছে বিএনপির তৃণমূলে

রাজশাহীতে কমিটি নিয়ে অস্থিরতা ম খুলনায় মাঠে নামছেন অভিমানী নেতারাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও খুলনা

পরিচিত মুখের সবাই বাদ। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়দের স্থান হয়েছে কমিটিতে। আর এনিয়ে মুখোমুখি রাজশাহী নগর বিএনপির দুই পক্ষ। আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন নেতারা। নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। রবিবার বিএনপির চার থানা কমিটির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। কমিটি বাতিল না হলে গণপদত্যাগের হুমকিও দিয়েছেন তারা। নগরীর বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান জানান, যাদের আহ্বায়ক কমিটিতে দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকে ২০-২৫ বছর রাজনীতির বাইরে। এমন নেতাদের দিয়ে রাজশাহী মহানগরীর রাজনীতি সম্ভব নয়। কয়েকজন আছেন, যারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট। রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি শওকত আলী বলেন, বিএনপিকে কৌশলে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এমন কমিটি দেওয়া হয়েছে। তারা এ কমিটি বাতিলের দাবি জানান। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ সময় যারা বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন, এমন পরিচিত মুখের সবাই বাদ। রাজপথের আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের ছাড়াই কমিটি নগর বিএনপির। সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন জোরদার করা সম্ভব নয় বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে।    বিএনপি নেতারা বলেন, এমন কমিটি দলটির সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভাটা ফেলবে। কারা নেতৃত্বে আসছে, দল ও গণতন্ত্রের স্বার্থে কেন্দ্র তা বিবেচনা করবে। শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি বাতিল না হলে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন নগর কমিটির নেতারা। দলটির সিনিয়র নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, নতুন কমিটি এলে এমন হওয়া স্বাভাবিক। তবে কারা নেতৃত্বে আসছেন তা দেখা দরকার কেন্দ্রের।

খুলনায় ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে নামছে অভিমানী নেতারাও : খুলনায় বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র দলের নতুন মেরুকরণ হয়েছে। সদ্য বিদায়ী নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠুর দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্কের উষ্ণতা তৈরি হয়েছে। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। ২০১৫ সালে থানা পর্যায়ে সম্মেলন করতে গেলে দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। জানা যায়, খুলনা মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতা মঞ্জু ও মিঠুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কথা হয়েছে। এ ছাড়া গত ১২ ডিসেম্বর ‘বিএনপি, খুলনা’র ব্যানারে মঞ্জুর সংবাদ সম্মেলনে মিছিল নিয়ে হাজির হন মিঠু। এ সময় মঞ্জু নিজেই তাকে মঞ্চে আসার আহ্বান জানান। বিএনপি নেতারা জানান, নগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কতিপয় নেতার মধ্যকার মতানৈক্য প্রকট আকার ধারণ করায় দল থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলমসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা। খুলনায় বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, অভিমান নিয়ে দূরে থাকা নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা একসঙ্গে এ ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আছি। নগর কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাঠের রাজনীতি করেছি। বিগত দিনে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা ও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আমাদের হক নষ্ট করা হয়েছে। বাইরের লোক এনে নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে। এখন খুলনার মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়েই আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। আমরা এ কমিটি মানি না। তথাকথিত এ কমিটি বাদ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে রাজপথে থাকব।’

জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর মহানগর কমিটির শীর্ষ এসব নেতাকে বাদ দিয়ে কেন্দ্র ঘোষিত আংশিক কমিটিতে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক করা হয়। এ ছাড়া তরিকুল ইসলাম জহিরকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে এতদিন অভিমান নিয়ে দূরে থাকা নেতারাও আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছেন। এরপর থেকেই বিএনপিতে বিভক্তি ও নানা নাটকীয়তার জন্ম নিচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর