বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়াবহ ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

তালিকা নেই মেয়াদহীন ভবনের, দুর্ঘটনা ঘটলেই দৌড়ঝাঁপ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে ২৬ নভেম্বর ভোরে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরের চকবাজার  এলাকায় একটি এবং হালিশহরে একটি বহুতল ভবন হেলে পড়ে। এর আগে ১০ এপ্রিল নগরের এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়ায় একটি পাঁচতলা ভবন হেলে পড়ে। বহদ্দারহাট সাবানঘাটা এলাকায়ও দুটি চারতলা ভবন একটির ওপর আরেকটি হেলে পড়ে। এভাবে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হেলে পড়ছে পাশের ভবনে। নড়েচড়ে উঠছে ভূমিকম্পের সময়। এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই বাস করছেন বাসিন্দারা। 

এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা দেখা যায় না। নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কিছুটা দৌড়ঝাঁপ দেখা গেলেও পরে তা থেমে যায়। এ ছাড়া নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হালনাগাদ নির্দিষ্ট কোনো তালিকাও নেই।

এমন অবস্থায় মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি চট্টগ্রাম নগরের পুরনো জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে সেগুলো দ্রুত অপসারণের সুপারিশ করেছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।

নিয়ম মতে, নগরে ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শনপূর্বক তালিকা করে সিডিএ। এ তালিকা সিডিএ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) হস্তান্তর করে। চসিক তা ভাঙার উদ্যোগ নেবে।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের হালনাগাদ কোনো তালিকা নেই। তবে এটি একটি সময়সাপেক্ষ। জনবল নিয়ে করতে হয় এমন কাজ। এ ছাড়া নীতিগত একটা সিদ্ধান্তের বিষয়। কিন্তু নানাভাবে চিহ্নিত হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। কিছুদিন আগেও চারটি ভবনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিডিএর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে। কমিটির প্রতিবেদন এবং পর্যবেক্ষণ মতে, প্রদত্ত তালিকা অনুযায়ী চসিক তা অপসারণের উদ্যোগ নেয়।   

জানা যায়, নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই সিডিএর কাছে। তবে সিডিএর ২০০৭ সালের তালিকা মতে, নগরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে ৫৭টি। এর মধ্যে আবাসিক ভবন ৩৫টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১২টি এবং শুধু বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ৯টি। এসব ভবন ভাঙার জন্য চসিককে তালিকা দেয়। সেখান থেকে মাত্র চসিক তিনটি ভবন ভাঙে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ভবন অপসারণ করে।

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন : চুয়েটের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রকৌশলী ড. জাহাঙ্গীর আলম ২৬ নভেম্বর ভূমিকম্পের পর নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।  প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নগরের ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া নগরের ১ হাজার ৩৩টি স্কুলের মধ্যে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে ৭৪০টি। অনেক স্কুল টেকসই নয়। এসব স্কুলকে টেকসই করতে শিগগিরই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

প্রকৌশলী ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা বলছিলাম, মিয়ানমার বর্ডার, বাংলাদেশ বর্ডার আর ইন্ডিয়া-মিয়ানমার বর্ডার- এ তিন জায়গাতে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হবে। মানে এসব জায়গা থেকে ৭.৫-৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। তাই কক্সবাজার ট্যুরিজম সিটি আর চট্টগ্রামে পুরনো ভবনগুলো ঝুঁকিতে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা হালনাগাদ করে সেগুলো দ্রুত অপসারণ করা জরুরি। একই সঙ্গে নগরের প্রতিটি ভবন পরীক্ষা করে দেখা দরকার যে, এগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী কি না। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর