বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

২২ বছর পর র‌্যাবের কবজায় ফাঁসির আসামি

পাওনা টাকা চাওয়াই কাল হলো নুরচানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ বছর ধরেই আত্মগোপনে ছিলেন হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। প্রকৃত নাম আদম খান পরিবর্তন করে হয়ে যান রফিকুল ইসলাম। শিশুসন্তানের সামনে মা নুরচান বেগমের এই খুনি এরই মধ্যে আশুলিয়া এলাকা থেকে প্রথমে জন্মসনদ, পরে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে নেন। চেহারায় পরিবর্তন আনতে মুখে দাড়িও রাখেন তিনি। তবু শেষ রক্ষা হয়নি। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৯-এর যৌথ দলের কাছে ধরা খেয়ে স্বীকার করেছেন আদ্যোপান্ত।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পাওনা ২ হাজার টাকা চাইতে যাওয়াই ছিল হবিগঞ্জ চুনারুঘাটের নুরচান বেগমের অপরাধ। টাকা না দিয়ে উল্টো গালিগালাজ, সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের ৩১ মে তিন বছরের শিশু সন্তানের সামনেই মা নুরচানকে খুন করে আদম খান ওরফে রফিক। খন্দকার মঈন বলেন, নুরচান খুনের ৭/৮ মাস আগে তার স্বামী আবদুর রহমান মারা যান। বিধবার মৃত্যুতে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে অথৈ সাগরে পড়েন। মাকে হত্যার ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় মামলা করেন নিহতের ছেলে শফিক।

সে সময় চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। আর্থিক সংকটের কারণে ভিকটিমের এক নিকটাত্মীয় এবং এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় মামলাটি পরিচালিত হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ২০০২ সালে আদালত আসামি আদম খানকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।

যে কারণে হত্যা : বাদী ও গ্রেফতার আদমের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের এক বছর আগে অভিযুক্ত আদম খান নিহতের ছেলে শফিকের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ধার নেন। এর পাঁচ মাস পর শফিকের বাবা আবদুর রহমানের মৃত্যু হয়। এ সময় পরিবারটি অভাব-অনটনে পড়ে। ১৯৯৯ সালের ৩১ মে আদম খানের কাছে টাকা চাইতে যান নুরচান। ধারের টাকা না দিয়ে পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করেন তিনি। এ সময় ভুক্তভোগী নুরচান তার তিন বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘটনার বিষয়টি জানাতে প্রতিবেশী আছমত উল্লার বাড়িতে যান। সেখানেই তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের বাঁ পাশে আঘাত করা হয়। এতে নুরচান বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান।

আত্মগোপনের কৌশল : হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাম থেকে পালিয়ে সিলেট শহরে সপ্তাহখানেক অবস্থান করেন অভিযুক্ত। এরপর  গ্রেফতার এড়াতে ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসেন। ২০১২ সালের মার্চ মাসে আদম খান মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করেন। ভুয়া জন্মসনদের বলে একটি এনআইডির জন্য আবেদন করে তিনি, যেখানে স্থায়ী ঠিকানা  দেওয়া হয় হবিগঞ্জের মাদকপুরে। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করেন এবং আসল নাম আদম খানের পরিবর্তে নিজেকে রফিক নামেই আশুলিয়ায় পরিচিত করেন। পরে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনআইডি এবং স্মার্ট এনআইডি কার্ড তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি আশুলিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন এবং ছদ্মবেশে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর নিজের গ্রামে যাননি আদম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর