শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা সংকটে বরেন্দ্র জাদুঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রাচীন সংগ্রহে সমৃদ্ধ বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি ধুঁকছে নিরাপত্তাহীনতায়। দেশের প্রথম এ জাদুঘরটির নিরাপত্তার দায়িত্বে শুধু আনসার সদস্যরা। প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরে হারিয়ে গেছে ১৮৫টি প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রীসহ প্রায় ৩ হাজার দুর্লভ বস্তু। এর মধ্যে দুটি ব্রোঞ্জ, দুটি কপার, দুটি লিনেন, একটি ব্রাশ, দুটি সিলভার, একটি ক্রিস্টালের হদিস নেই। এ ছাড়া দুটি প্রাণীর চামড়া, ৪৭টি বিভিন্ন ধরনের পাথর, ১০১টি টেরাকোটা, ১৩টি কাগজ, ৩৩টি মুদ্রা ও ৮৫টি বই নেই। ৫২টি পুস্তক-পুস্তিকা ও জার্নাল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত জাদুঘরের এক ইনভেন্টরি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। জাদুঘরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সুলতান আহমদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ওই ইনভেন্টরি তৈরি করে। জাদুঘরসূত্রে জানা গেছে, এখানে সংগ্রহের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। মোগল থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত সময়ের রৌপ্য, ব্রোঞ্জ ও মিশ্র ধাতবের ৪০০ মুদ্রা, ৬১টি লেখচিত্র, প্রায় দেড় হাজার পাথর ও ধাতবমূর্তি, ২ হাজারের মতো প্রাচীন মুদ্রা, পোড়ামাটির ভাস্কর্য, পত্র ও ফলক প্রায় ৯০০, প্রায় ৬০টি প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র, বেশকিছু আরবি-ফারসি দলিল এবং সাড়ে ৪ হাজারের মতো পা-ুলিপি আছে। জাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষে ১৪টি গ্যালারিতে সাজানো আছে এসব। ইসলামী গ্যালারিতে আছে হাতে লেখা কোরআন শরিফ, মোগল আমলের পোশাক। এখানে আছে প্রাচীন আমলের ঢাল-তলোয়ার, ধাতব পাত্র, মহেঞ্জোদারো ও মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন নিদর্শন। আরও আছে প্রাচীন আরবি, ফারসি, সংস্কৃত, বাংলা লেখচিত্র এবং পাল, সুলতানি, মোগল আমলের শিলালিপি এবং শেরশাহর দুটি কামান ও মেহরাব।

রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁয় জাদুঘরটির অবস্থান। ১৯১০ সালে নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদার কুমার শরৎ কুমার রায়, রাজশাহীর খ্যাতনামা আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ্র জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর তাঁরা প্রাচীন ঐতিহ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য ‘বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি’ গঠন করেন। সমিতি বিভিন্ন স্থান থেকে কালো পাথরের বিখ্যাত গঙ্গামূর্তিসহ পুরাতত্ত্বের ৩২টি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন সংগ্রহ করে। সংগৃহীত নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের জন্য একটি জাদুঘর ভবন নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়লে শরৎ কুমার নির্মাণ কাজে হাত দেন। বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজ শেষে ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর জাদুঘরের দ্বার উন্মোচন করেন তৎকালীন গভর্নর লর্ড রোনাল্ডসে। এরপর ১৯৬৪ সালে জাদুঘরটি পরিচালনার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এখনো এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায় একটি গেট খোলা। সেখানে দুজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ভিতরে বারান্দার এখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রাচীন নিদর্শন। জাদুঘরে দায়িত্বরত আনসারদের সহকারী প্লাটুন কমান্ডার লোকমান হাকিম জানান, এখানে তারা মোট ১০ জন আছেন। এত বড় একটি জাদুঘরের নিরাপত্তায় দিনরাত সব সময় দুজন করে আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। প্রত্যেকের ডিউটি চার ঘণ্টা করে। আধুনিক যুগে এসেও এখন পর্যন্ত জাদুঘরটিতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগানো হয়নি। জাদুঘরের পরিচালক ড. আলী রেজা মুহম্মদ আবদুল মজিদ গতকাল বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছি। তা প্রায় দুই বছর আগে। জাদুঘর করোনার জন্য বন্ধ বলে আর প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়নি।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘জাদুঘরে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা দরকার, জনবলও দরকার। সেগুলোর ব্যবস্থা অচিরেই করা হবে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর