রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস

রাজশাহী নগরীর টিবি পুকুর এলাকায় পাঁচটি পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৩২ পরিবার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহী নগরীর টিবি পুকুর এলাকায় পাঁচটি পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে ৩২ পরিবার। ভবনগুলো অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বাসা ভাড়া বাঁচাতে পরিবারগুলো বছরের পর বছর এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাস করছে। পরিত্যক্ত এই আবাসিক ভবনগুলো রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি)। ভবনের বাসিন্দাদের পরিবারের কেউ আইএইচটি, কেউ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য কোনো দফতরের সাবেক বা বর্তমান চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। নিম্নআয়ের মানুষগুলো শুধু বাসা ভাড়া বাঁচাতেই এখানে বাস করছে।    টিবি পুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দুটি দোতলা, একটি তিনতলা ও দুটি একতলা ভবন। ভবনগুলো একেবারেই জরাজীর্ণ। খসে পড়ছে পলেস্তারা, দেয়ালে দেয়ালে জন্মেছে গাছপালা। বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। দোতলা একটি ভবনের কাছে গিয়ে দেখা গেল, একটি জানালারও রড নেই। রডের বদলে সেট করা হয়েছে কাঠ। বাসিন্দারা জানান, আগে ভবনগুলোতে শুধু আইএইচটির কর্মচারীরা থাকতেন। কেউ কেউ ভবন ছেড়ে চলে যাওয়ায় রামেক হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের কর্মচারীরাও ভবনগুলোতে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। অনেকে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাও তারা পরিবার নিয়ে এখানে থাকেন। পরিত্যক্ত ভবন হওয়ায় এর ভাড়া দেওয়া লাগে না। সে কারণেই তারা এখানে থাকেন। দোতলা ভবনের নিচতলায় থাকেন আবদুর রাজ্জাক। তিনি জানালেন, তার স্ত্রী হাসিনা খাতুন রামেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। স্থায়ী চাকরি নয়, দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী তিনি। যা বেতন পান তা দিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে এখানেই থাকেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাদের আটবার নোটিস করা হয়েছে। তাও তারা ছেড়ে যাননি। ‘নিজ দায়িত্বে’ তারা এখানে আছেন। দোতলা আরেকটি ভবনের বারান্দায় বসেছিলেন শরিফা বেগম। তিনি জানালেন, তার স্বামী আমিরুল ইসলাম আইএইচটির কর্মচারী ছিলেন। অনেক আগেই অবসর নিয়েছেন। এখন বাসা ভাড়া করে থাকার মতো আর্থিক সক্ষমতা তাদের নেই। তাই এ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে আছেন। শরিফা জানান, এসব ভবনে ৩২টি পরিবারের শতাধিক মানুষ থাকেন। এসব পরিবারে শিশু সদস্যও আছে। রাজশাহী আইএইচটির অধ্যক্ষ ফারহানা হক বলেন, ভবনগুলো গণপূর্ত বিভাগ অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। এরপরও কিছু মানুষ থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও তারা ‘নিজ দায়িত্বে’ থাকে। অনেকে ভিতরটা নিজেদের মতো করে সংস্কার করেছে। তিনি জানান, পাঁচটি পরিত্যক্ত ভবন এবং আশপাশের অনেক জায়গা আইএইচটির। কিছু জায়গা রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য সিটি করপোরেশন গ্রহণ করবে বলে তিনি চিঠি পেয়েছেন। বাকি জায়গায় কী করা হবে সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভবনগুলো আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ। করোনার কারণে দেড় বছরে আমরা সেগুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। তবে সম্প্রতি আমি আমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। দ্রুতই আইএইচটির অধ্যক্ষের সঙ্গে মিটিং করব। একটা ডিজিটাল সার্ভেও করব। তারপর ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে। প্রয়োজন থাকলে নতুন কোয়ার্টার করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর