বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে হেলে পড়েছে তিন ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে হেলে পড়েছে তিন ভবন

চট্টগ্রাম নগরের মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড রোডের পার্বতী ফকিরপাড়ায় দুটি আবাসিক ভবন ও একটি মন্দির হেলে পড়েছে। এর মধ্যে আবাসিক ভবন দুটি পাশ দিয়ে যাওয়া খালে দেবে গেছে। এই তিনটি স্থাপনার আশপাশের আরও পাঁচটি টিনশেডের আধাপাকা কাঁচাঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত সোমবার রাতে নগরের সদরঘাট থানার ওই এলাকায় গুলজার খাল পাড়ে দুটি ভবন হেলে পড়া ও ফাটলের খবর জানাজানির পর এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে ওই খালের সংস্কারকাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে খাল থেকে মাটি উত্তোলনের সময় সোমবার মন্দিরসহ তিনটি ভবন হেলে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মালিকদের অভিযোগ, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খাল সংস্কারের কারণে ভবনগুলো হেলে পড়েছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্ট্যান্ড রোড সড়কের জনতা ব্যাংকের পাশে সরু পথ দিয়ে কয়েক গজ দূরে পার্বতী ফকিরপাড়ায় উৎসুক জনতার ভিড়। খালে সংস্কারকাজ চলছে। হেলে পড়া ভবন দুটির (তিন তলা ও দোতলা) আংশিক অংশ খালে হেলে পড়েছে। দোতলা ভবনের সামনের অংশে শ্রীশ্রী বিষ্ণু ও জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরে ঢোকার মুখে মাটি সরে এক ফুটের বেশি উঁচু হয়ে গেছে। পেছনে দোতলা ভবনটি খালের দিকে দেবে গেছে। ওই ভবনের বাঁ পাশে তিন তলা ভবনেরও একই অবস্থা। দুই ভবন একটির সঙ্গে অন্যটি লেগে গেছে। দোতলা ভবনের ডান পাশে পাঁচটি টিনশেডের আধাপাকা ঘরের মেঝে ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই ক্ষতিগ্রস্ত দুটি ভবন ও পাঁচটি কাঁচাঘরের অর্ধশতাধিক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল চউক ওই দুটি ভবনকে বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে।

ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভিতরে ভাঙার কাজ শুরু করেছে। খালের সংস্কারকাজ বন্ধ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্ট্যান্ড রোডে দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভরত পুনম দাশ ও রত্না দাশ বলেন, খালের সংস্কারের কারণে আমাদের ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ঘরগুলো ভাঙছে সিডিএ। ক্ষতিপূরণের দাবিতে আমরা বিক্ষোভ করছি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখন কোথায় যাব। ঘটনাস্থলে সিডিএর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান বলেন, ভবন দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে আপাতত ভবনের ভিতরে দেয়াল অপসারণের কাজ শুরু করেছি, যাতে ধসে পড়লে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। শাহিনুল ইসলাম বলেন, খালের সীমানা থেকে ১৫ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা থাকার কথা নয়। কিন্তু ভবন দুটি খালের কাছাকাছি। চউকের অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি। অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাতে পারলে আমরা বিষয়টি দেখব। আমরা ভবন ভাঙছি না।

ভার কমাতে ভিতরের দেয়াল ভাঙা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সিভিল ডিফেন্স আগ্রাবাদের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, খালের সংস্কারের কারণে দুটি ভবন ও একটি মন্দির হেলে পড়েছে। ভবনগুলো ভাঙা

হবে। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যরা ঘটনার জন্য সিডিএর খাল, সংস্কারকাজকে দায়ী করে বলেন, এসব ভবন ও বসতিতে প্রায় ৮০ জন মানুষ বসবাস করে। শ্যামলী দাশ অভিযোগ করেন, প্রায় দুই মাস ধরে খালের সংস্কারকাজ চলছে। কয়েক দিন ধরে মাটি দেবে যেতে থাকলে তারা সিডিএর কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হেলে পড়া দোতলা ভবনে মনোরঞ্জন দাশ ও তার দুই ছেলের (বাদল দাশ ও শ্যামল দাশ) পরিবার থাকে। তিন তলা ভবনে থাকে সন্তোষ দাশ, স্বপন দাশ ও তৃষ্ণা দাশের পরিবার। মন্দিরের ডান পাশে আরেকটি তিন তলা ভবনেও আংশিক ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ভবনে ছয়টি পরিবার থাকে। টিনশেডের পাঁচটি ঘরের একটিতে হীরালাল দাশের মেয়ে অনুপা দাশ থাকেন। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাত থেকেই আমরা আতঙ্কে আছি। ভবনগুলো ভাঙছে, কিন্তু আমাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে, তা কেউ বলছে না। আমরা যাব কোথায়?

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর