বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মেয়র আরিফকে নিয়ে আওয়ামী লীগের দ্বৈতনীতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাননি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদস্বরূপ তারা মেয়র আরিফ আয়োজিত এই সংবর্ধনায় যোগ দেননি। তবে সিটি করপোরেশন আয়োজিত এই সংবর্ধনায় যোগ না দিলেও বিভিন্ন সময় মেয়র আরিফের সঙ্গে একই মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন আচরণকে ‘দ্বৈতনীতি’ হিসেবেই মনে করছেন অনেকে। গতকাল বিকালে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আবদুল মোমেনকে সিসিকের উদ্যোগে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে আনায় এবং সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়ক এবং নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিশেষ অবদানের জন্য, সিলেটের কৃতী সন্তান, সিলেট-১ আসনের এমপি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বৈঠক করে অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আরিফের অনুষ্ঠানে আমরা যাব না। এটা তো বিএনপির অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান আমরা বর্জন করেছি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সিলেট সফরকালে অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমরা থাকছি।’ জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘বিরোধের’ সূত্রপাত গত ৫ সেপ্টেম্বর।

 সেদিন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মৌলভীবাজারে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় মেয়র আরিফ আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘গন্ডারের’ সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘সিলেটে সাইফুর রহমানের বিভিন্ন উন্নয়নকর্মকান্ড থেকে তার নাম যেভাবে মুছে ফেলে দেওয়া হয়েছে; তেমনি খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের নামও মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু নাম মুছে ফেললেও তারা মানুষের মুখ থেকে নতুন কারও নাম কিন্তু উচ্চারণ করাতে পারছে না। এদের ধিক্কার দেওয়া ছাড়া কোনো বক্তব্য আমার মুখেও আসতেছে না। এদের চামড়া এত শক্ত; যে গন্ডারের চামড়া থেকে আরও বেশি। এদের গায়েও কিছু লাগে না।’

আরিফের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তারা আরিফকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। সিটি করপোরেশনের বাজেট সম্মেলনে তিনি এ বক্তব্যের জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের একই মঞ্চে দেখা যায়। সর্বশেষ বড়দিনের অনুষ্ঠানে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক প্রেসবিটারিয়ান চার্চে  মেয়র আরিফকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন কেক কাটেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়রের ওপর রাগ দেখিয়ে তা বয়কট করেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর