সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অবশেষে চার লেন হচ্ছে সিলেট বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়ক

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। কিন্তু পরিকল্পনা আর প্রকল্প প্রস্তুতেই কেটে গেছে প্রায় ১২ বছর। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে আশার খবর হচ্ছে অবশেষে সড়কটি চার লেনে উন্নীত হতে যাচ্ছে। প্রকল্পটি এখন একনেকে উপস্থাপনার অপেক্ষায়। সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭২৭ কোটি টাকা। বিমানবন্দর-বাদাঘাট সড়কটি চার লেনে উন্নীত হলে সিলেট নগরীর ভিতর দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ হবে। পাশাপাশি যানজন ও দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছেন নগরবাসী। জানা গেছে, সিলেটের বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও সড়কটি বর্তমানে দুই লেনের। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে সড়কটি বেহাল। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি নির্মাণ করা হয় ২০১২-১৪ অর্থবছরে। পরবর্তীতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল, বিমানবন্দর অভিমুখীদের সুবিধা এবং পর্যটকবাহী যান চলাচলের জন্য সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। পরের বছর চার লেন সড়কের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে তৈরি করা হয় সংশোধিত প্রস্তাবনা। ২০১৯ সালের দিকে শুধু চার লেনের প্রস্তাবনা জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কাজের কাজ আর কিছুই হচ্ছিল না। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সর্বশেষ মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে গতি আনার চেষ্টা করেন। তার চেষ্টায় ২০২০ সালের ৮ আগস্ট সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সড়কটি পরিদর্শন করে। ওইদিন প্রতিনিধি দল রাস্তাটি নিয়ে সিলেটের রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আগের প্রস্তাবিত নকশা সংশোধন করে ৬ মাসের মধ্যে কাজ শুরুর আশ্বাস দেয় প্রতিনিধি দলটি। কিন্তু এরপর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি। অবশেষে বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি একনেকের আগামী সভায় উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে। সেখানে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর শুরু হবে কাজ। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কের বাঁধে মাটির কাজ, সয়েল ট্রিটমেন্ট, রিজিড, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, বাস-বে নির্মাণ, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পিসি গার্ডার সেতু এবং আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের সঙ্গে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় যানজটমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে।

বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও চার লেন সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও বড়শলা থেকে পাথরবোঝাই ট্রাক আর নগরীর ভিতর দিয়ে চলাচল করতে হবে না। পাথর নিয়ে চার লেনের ওই সড়ক ব্যবহার করে কুমারগাঁও হয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ওঠতে পারবে। এতে নগরীর ভিতরে ট্রাক চাপায় হতাহতের ঘটনাও বন্ধ হবে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ থেকে আসা ওসমানী বিমানবন্দরের যাত্রীরা সিলেট নগরীতে না ঢুকে ওই সড়ক দিয়ে সহজে চলে যেতে পারবে। কোম্পানীগঞ্জে নির্মিণাধীন আইসিটি পার্কের সঙ্গেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে এই চার লেনের সড়ক। চার লেনের এই সড়কটি সিলেটের পর্যটন খাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেটের বাইরে থেকে যেসব পর্যটক ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যাবেন তাদের আর সিলেট নগরীতে প্রবেশ করতে হবে না। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক হয়ে বিকল্প ওই রাস্তা দিয়ে তারা যেতে পারবেন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এতে নগরীর যানজটও কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর