সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্র্যাক প্লাটুনের মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্র্যাক প্লাটুনের মিলনমেলা

মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ক্র্যাক প্লাটুন সদস্যদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত শনিবার বছরের প্রথম দিনে। ঢাকার পূর্বাচলে মুক্তিযোদ্ধা বীরবিক্রম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর (মায়া) বাসভবনে এ মিলনমেলা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মাহফুজুর রহমান (আমান)। এর সামগ্রিক আয়োজন করেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর (মায়া) সহধর্মিণী রিনি  চৌধুরী। মিলনমেলায় অংশ নেন বীরপ্রতীক গাজী গোলাম দস্তগীর, বীরপ্রতীক হাবিবুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক খান বাদল, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, মকবুল ই এলাহী  চৌধুরী নসু, আমান, তারেক, নুরুল হক, মাশরুকুল হক, মুরাদ, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, রিজভী, নুরুল আলম, মাবুদুর রহমান, আলী আকবর, মশগুল, হাসিনুর রহমান, আবদুর রশীদ, শহীদুল হক খান বাদল, ইব্রাহীম মোহন, মুকুট, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী, তাসলিম উদ্দিন, দুলাল, সামসুদ্দিন, নজরুল, কুতুবুদ্দিন, ওয়ালী  মোহাম্মদ, ফরহাদ, হাবিবুল আলম, জিয়া উদ্দিন, হায়াতুজ্জামান, হাসমি সালেহ, পদ্মা রহমান, শহীদ প্রমুখ। উল্লেখ্য, বীরবিক্রম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ক্র্যাক প্লাটুনের এই পুনর্মিলন সম্ভব হয়। এর আগে মিলনমেলা হয়েছিল ২০১৮ সালে রাজধানীর বেইলি রোডের ২৪ নম্বর বাড়িতে। প্রসঙ্গত, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) ছিলেন ক্র্যাক প্লাটুনের প্রধান। ক্র্যাক প্লাটুনের নামকরণ করেছিলেন ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল)। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকার দুর্ধর্ষ গেরিলা যোদ্ধা ক্র্যাক প্লাটুন ৫টি স্কোয়াডে বিভক্ত ছিল। ভারতে এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন এই প্লাটুনের  যোদ্ধা। ঢাকা শহরে সেই সময় ক্র্যাক প্লাটুনের অপারেশন ছিল?কিংবদন্তিতুল্য ঘটনা। এই স্কোয়াডের সব সদস্যই সঙ্গে মৃত্যুবিষ, পটাশিয়াম সায়ানাইড রাখতেন। কারণ, ধরা পড়লে যাতে শত্রুর হাতে মৃত্যু ও নির্যাতন ভোগের বদলে নিমেষেই নিজেকে শেষ করে দেওয়া যায়। ঢাকার বহু গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং স্থানে ক্র্যাক প্লাটুনের অপারেশন ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বড় প্রেরণা। অপারেশনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুবার অপারেশন, উলান পাওয়ার স্টেশন অপারেশন, গুলশান পাওয়ার স্টেশন অপারেশন, গোপীবাগ পাওয়ার স্টেশন অপারেশন, ধানমন্ডি ও গ্রিনরোডে পাকিস্তানি আর্মির  চেকপোস্টে একযোগে আক্রমণ, আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে অপারেশন, ফার্মগেটে পাকিস্তানি সামরিক চৌকিতে অপারেশন- ইত্যাদি মিলিয়ে ১৯৭১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছোট-বড় অন্তত ৭০টি অপারেশন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ক্র্যাক প্লাটুনের মতো আর কোনো একক গ্রুপের এত  বেশি বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীক খেতাব প্রাপ্তি নেই। বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন ১। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া), ২। শহীদ শাফি ইমাম (রুমী), ৩। শহীদ মোহাম্মদ আবু বকর (বাকের), ৪। শহীদ বদিউল আলম (বদি), ৫। শহীদ আবদুল হালিম চৌধুরী (জুয়েল), ৬। কাজী কামাল উদ্দিন (কাজী) ও ৭। কামরুল হক (স্বপন)। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন ১। গোলাম দস্তগীর (গাজী) এমপি ২। হাবিবুল আলম ৩। আবদুস সামাদ ৪। জিয়াউদ্দিন আলী আহম্মেদ (জিয়া)। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনের সকালে ডিআইটি ভবনের টেলিভিশন স্টেশনের শিখরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। প্লাটুনের সবাই তখন জয়-বাংলা  ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলেন। ঢাকা শহরের বুকে প্রকাশ্যে লাগানো এটাই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সব মিলিয়ে ক্র্যাক প্লাটুন ইতিহাসের এক গৌরবময় স্মৃতি।

সর্বশেষ খবর