সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ইঞ্জিনচালকদের ভূমিকা ছিল ধৃষ্টতাপূর্ণ ও পলায়নপর

লঞ্চে আগুন সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ইঞ্জিনকক্ষের দুই চালক আত্মসমর্পণের পর তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, ইঞ্জিনচালকরা কেবল দায়িত্বে অবহেলাই করেননি, অগ্নিকান্ডের পর তাদের ভূমিকা ছিল ধৃষ্টতাপূর্ণ ও পলায়নপর। গতকাল নৌ-আদালতের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ৬ নম্বর আসামি লঞ্চের ইনচার্জ চালক মো. মাসুম বিল্লাহ ও ৮ নম্বর আসামি দ্বিতীয় চালক আবুল কালাম নৌ-আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন নৌ-পরিবহন অধিদফতরের প্রসিকিউটিং অফিসার বেল্লাল হোসাইন। তিনি জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ইঞ্জিনকক্ষের সার্বিক দায়িত্ব ইঞ্জিনচালকদের ওপর বর্তায়। ইঞ্জিনকক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তারা যদি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিকভাবে ইঞ্জিনকক্ষ পরিচালনা করতেন, তাহলে হয়তো এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঠেকানো যেত। কিন্তু তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, আসামিরা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাধ্যমতো চেষ্টা করেও সফল হননি। তাদের অবহেলা ছিল না। আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে নৌ-আদালতের বিচারক জয়নাব বেগম তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২৬ ডিসেম্বর স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাব বেগমের নৌ-আদালতে নৌ-অধিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শফিকুর রহমান স্পেশাল মেরিন আইনে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আসামিরা হলেন- লঞ্চের মালিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কোম্পানির চার মালিক মো. হামজালাল শেখ, মো. শামিম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি, ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার, ইনচার্জ চালক মো. মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় মাস্টার মো. খলিলুর রহমান এবং দ্বিতীয় চালক আবুল কালাম। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২৩ ডিসেম্বর আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে এমভি অভিযান-১০ বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চটি ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা অতিক্রম করার পর রাত আনুমানিক ৩টায় ইঞ্জিনরুমে আগুন লাগে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর লঞ্চঘাটের আগে জাহাজে থাকা যাত্রীদের অনেকে নদীতে লাফ দেন। আগুনে কেবিনসহ সবই পুড়ে যায়। ইনচার্জ মাস্টার, ইনচার্জ ড্রাইভার ও সেকেন্ড ড্রাইভার আগুন নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ না নেওয়ায় ৪২ জন যাত্রী পুড়ে মারা যান। প্রায় শতাধিক যাত্রী দগ্ধ হন। নৌযানটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ বয়া, বালির বাক্স ও বালতি ছিল না। ইঞ্জিনরুমের বাইরে অনেক ডিজেলবোঝাই ড্রাম ও রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ খবর