সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
জয়পুরহাটে বসুন্ধরা গ্রুপের কম্বল বিতরণ

‘কম্বলটা দিয়া মোক বাঁচালিন বাবা’

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

‘কম্বলটা দিয়া মোক বাঁচালিন বাবা’

‘বাবারে ঠান্ডার মধ্যে বড়ই কষ্ট। ঠান্ডার জ¦ালায় সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারি না। ভাঙা জানালা দিয়ে শির শির করে আসা বাতাসে গোটা গাও (শরীর) বরফ হয়ে যায়। কম্বলটা দিয়া মোক (আমাকে) বাঁচালিন (বাঁচানো) বাবা। খায়া থাকো আর না খায়া থাকো চোখের পাতাটাতো এক করা পারমু’। বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া কম্বল হাতে পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাট পৌরসভার সবুজনগর মহল্লার অশীতিপরের বৃদ্ধা রাহেলা বেওয়া। কম্বল পেয়ে খুশি হয়ে পাঁচুর চক মহল্লার দরিদ্র নারী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ বাবা। হামাগেরে এই বিপদে যে কম্বল দিয়ে সাহায্য করল আল্লাহ যেন তার বাল-বাচ্চাকে সুখে শান্তিতে রাখে’। গতকাল জয়পুরহাট শহরের রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ৪০০ শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে সারা দেশে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। আর কম্বল বিতরণের আয়োজন করছে কালের কণ্ঠ শুভসংঘ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোস্তাকিম ফাররোখ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খ ম আবদুর রহমান রনিসহ অন্যরা। তাঁরা বলেন, ‘অসহায় শীতার্ত মানুষদের কম্বল দিয়ে সহযোগিতা করছেন দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। মানুষের জন্য তাঁর এই মহানুভবতার কোনো তুলনা নেই। এর আগে করোনা সময়েও তিনি দেশের অসহায় মানুষদের ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা সবাই প্রাণভরে দোয়া করব, তিনি যেন সব সময় মানুষের কল্যাণে এভাবেই পাশে দাঁড়াতে পারেন’। বাজলা স্কুল মাঠে কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি আলমগীর চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি শামিম কাদির, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও শুভসংঘ জয়পুরহাট জেলা শাখার সভাপতি তিতাস মোস্তফা, সহসভাপতি আরাফাত হোসেন মুন, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব জেসান, জয়পুরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর পাপিয়া বারিক, শুভসংঘের আবাবিল হাকিম, সালেহর রহমান সজীব, গুলশান আরা ও আরজু আশা। এর আগে জয়পুরহাট পৌরসভার সবুজনগর আল-হেরা নূরানী হাফেজিয়া এতিমখানা মাঠে ২০০ কম্বল এবং বিকালে ক্ষেতলাল উপজেলার সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে ৪০০ কম্বল এতিম, দুস্থ ও দরিদ্র শীতার্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণের পর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে দোয়া করেন সবুজনগর এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসার প্রধান মওলানা হাফেজ মো. নুর আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এতিমখানার সভাপতি মো. মাছুদুল কবীর সুহাস, মাদরাসা পরিচালক আপন মন্ডল, শিক্ষক মিজানুর রহমান, মোস্তাকিম বিল্লাহসহ অনেকে। কম্বল পাওয়ার পর খুশি হয়ে কালাই উপজেলার করিমপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বয়সের মন্তেজার রহমান বলেন, ‘শীতে চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ হামাগেরে খবর নেয়নি। অথচ যাদের চিনি না, জানি না, ভোটও দেওয়া হয়নি তারাই হামাগরক (আমাদের) কম্বল দিয়ে সাহায্য করোচে (করছে)।

এমন মানুষের আল্লাহ ভালো করবে’। কম্বল পাওয়ার পর এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন আরও অনেক দরিদ্র মানুষ। ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নীরেন্দ্রনাথ মন্ডল, ব্যাংক ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সাবেক এলাকা পরিচালক আবদুস সবুর চৌধুরী, ক্ষেতলালের মানবিক সংগঠনের সভাপতি ফেরদৌসী রহমান রানাসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

সর্বশেষ খবর