সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিচারপতি টি এইচ খানের ইন্তেকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

 বিচারপতি টি এইচ খানের ইন্তেকাল

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টি এইচ খান আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে তিনি রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি টি এইচ খান তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ২০১১ সালে বিপত্নীক হন বিশিষ্ট এই আইনজীবী। আজ তাঁর লাশ গ্রামের বাড়ি নেওয়া হবে। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন আইনজীবী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁর মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানান গভীর সমবেদনা। ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন টি এইচ খান। তিনি সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করলেও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে গত পাঁচ বছর আদালত প্রাঙ্গণে যেতে পারেননি। বিচারপতি টি এইচ খান নামে তিনি সমধিক পরিচিত হলেও তাঁর প্রকৃত নাম তাফাজ্জাল হোসেন খান। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৫১ সালে হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাই কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। দেশ স্বাধীনের পর আর বিচার বিভাগে যোগ দেননি। ১৯৭৩ সালে পুনরায় আইন পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভ‚মি ও রাজস্ব এবং ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করলে তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৬ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

১৯৯২ সালে টি এইচ খান জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশনের সদস্য এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। এরপর দেশে ফিরে আবার আইন পেশা শুরু করেন।

বিচারপতি টি এইচ খান ১৯৯২ সালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রে প্রধান বিচারপতি সালেহ আকরামের নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতি নিয়ে যেদিন ঢাকা হাই কোর্টের যাত্রা হয় সেদিনই টি এইচ খান একজন আইনজীবী হিসেবে সেই আদালতে (বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট) পদচারণ শুরু করেন। আইন পেশা ছাড়াও প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন টি এইচ খান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর