রংপুরে একশ্রেণির নারী বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ছিনতাই, মাদক বিক্রি ও বহন, যৌনতার জালে ফেলে প্রতারণা, নকল টাকা বহনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে স্বামী কিংবা পরিবারের প্রধানরা এ কাজে সহায়তা করছেন। সম্প্রতি রংপুরে বেশ কয়েকটি ঘটনায় নারী অপরাধীদের সংশ্লিষ্টতা সুধী মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, নারী অপরাধীর সংখা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক মাসে মহানগরেই কমপক্ষে চারটি ঘটনায় বেশ কয়েকজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা অপহরণ, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
১৪ জানুয়ারি র্যাবের অভিযানে মুক্তিপণ দাবিতে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে তিনজন গ্রেফতার হন। এর মধ্যে খাদিজা বেগম (৩৭) নামে এক নারী রয়েছেন। এর আগে প্রেম-প্রতারণার অভিনব ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা আনিসাকে (৩৬) গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এর এক দিন আগে একই অপরাধের অভিযোগে র্যাব শাহরুখ করিম অনীক (৩৪) ও তার স্ত্রী আসমানী আক্তারকে (২৪) গ্রেফতার করেছে। তারা রংপুর মহানগরের সেনপাড়া রোড এলাকার বাসিন্দা। তারা ধনীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে অশ্লীল ছবি তুলে অর্থ আদায় করতেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে টর্চার সেলে তাদের নির্যাতন করা হতো। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রংপুরে কথিত জিনের বাদশাহ পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৭৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এর আগে রংপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেজে প্রতারণার অভিযোগে আনিকা তাসনিম সরকার ওরফে অনামিকা নামে এক নারীকে গ্রেফতার করে পিবিআই। কথিত এই নারী ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্য সদস্যরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে নিত্যনতুন প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে ঠকিয়ে আসছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ভোরে তাকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ছাড়া রংপুর নগরে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক আপত্তিকর ছবি তুলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ১৯ আগস্ট রাতে নগরের কটকিপাড়া পিটিআই রোডের এক ভাড়া বাসা থেকে শাহিনা ওরফে শীলা আক্তার ওরফে ঈশা ও মোমিন নামে এক নওমুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার একজন শিক্ষক তার স্ত্রীকে ডেন্টিস্ট দেখাতে রংপুর নগরের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসেন। এ সময় প্রতারক চক্রের সদস্য শাহিনা বেগমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রতারক নিজেকে নার্স পরিচয় দিলে ওই শিক্ষক তার ডান হাতে ব্যথার কথা জানান। ওই প্রতারক রংপুরে ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ফোন নম্বর বিনিময় করেন। পরে ওই শিক্ষকের সঙ্গে তার প্রায়ই কথা হতো। ১১ আগস্ট প্রতারক শাহিনা তাকে ডাক্তার দেখাতে রংপুর ডেকে পাঠান। তার কথায় ওই শিক্ষক রংপুরে এলে শাহিনা ‘ডাক্তার বসতে একটু দেরি হবে’ বলে তাকে পাশেই পরিচিত ভাবির বাসায় গিয়ে রেস্ট করার জন্য নিয়ে যান। এ সময় ওই চক্রের মোমিন নামে একজনসহ কয়েকজন বাসায় ঢুকে অন্য মেয়েদের সঙ্গে তার ছবি তুলে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে এ ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে লজ্জায় বাধ্য হয়ে বিকাশে ৩৫ হাজার টাকা দেন ওই শিক্ষক। এরপর ১৯ আগস্ট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এর আগে নগরের হাজিরহাটে অপহরণ ও অশ্লীল ছবি তোলার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়। সূত্রমতে এ পর্যন্ত ২৫টির মতো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।