মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কীর্তনখোলা নদী গ্রাসের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই

কাজ হচ্ছে না জেলা প্রশাসনের তৎপরতায়ও

রাহাত খান, বরিশাল

কীর্তনখোলা নদী গ্রাসের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই

বরিশাল মহানগরের ধান গবেষণা রোডের পাকার মোড় এলাকায় নদীর মধ্যে গাইডওয়াল নির্মাণ করে ক্রমেই কীর্তনখোলা দখলের অভিযোগ উঠছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বরিশাল মহানগরের ধান গবেষণা রোডের পাকার মোড় এলাকায় একটু একটু করে কীর্তনখোলা নদী গ্রাস করার অভিযোগ উঠেছে। দুই বছর আগে জেলা প্রশাসন নদীতীরের ওই অবৈধ দখল গুঁড়িয়ে দিলেও বর্তমানে আরও আওতা বাড়িয়ে নদী দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেখানে কাঠের জেটি ও গাইডওয়াল নির্মাণ করে দখল পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। সেখানে আরও গড়ে উঠেছে গোডাউন, ডকইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা। এভাবে নদী দখল চলতে থাকলে কীর্তনখোলার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত এবং পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নদীতীরের ওই সম্পত্তি নিজের রেকর্র্ডীয় দাবি করেছেন রাইভিউল কবির স্বপন। আর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক। ধান গবেষণা রোডের পাকার মোড় এলাকায় দুই বছর আগে কীর্তনখোলা নদীর তীরে ব্লক ফেলে বালু ভরাট করে নদীতীর দখলের অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ী স্বপনের বিরুদ্ধে। ওই বছরের মধ্য জানুয়ারিতে জেলা প্রশাসন বুলডোজারে তার অবৈধ দখল গুঁড়িয়ে দেয়। এর পর থেকে আর নদীর অবৈধ দখলের বিষয়ে কোনো তদারকি ছিল না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ সুযোগে স্বপন আগের দখল সীমারেখা ছাড়িয়ে আরও অন্তত ২৫ ফুট নদীর মধ্যে দখল পাকাপোক্ত করেন। সেখানে ব্লক গেঁথে গাইডওয়াল করে বালু ভরাট করেন। পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে কাঠ ও বাঁশের একটি জেটি। ওই জেটি দিয়ে জাহাজে আসা কয়লা, পাথর ও বালু খালাস করা হচ্ছে। এর পাশেই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে একটি ডকইয়ার্ড ও একাধিক গোডাউন। বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘কীতর্নখোলা নদীর পাকার মোড় এলাকায় দুই বছর আগে নদীতীরের অনেক জায়গা দখল করে নির্মিত স্থাপনা জেলা প্রশাসন ভেঙে দিয়েছিল। তখন কথা ছিল অবৈধ দখলদার নিজেই বাকি স্থাপনা সরিয়ে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তার অবৈধ দখল সরিয়ে না নিয়ে এবার নদীর তীরে আরও অন্তত ৩০ ফুট জায়গাজুড়ে ব্লক ফেলে গাইডওয়াল নির্মাণ করে বালু ভরাট করেছেন। এভাবে দখলদাররা ক্রমাগত কীর্তনখোলা দখল করছে। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের তালিকাও হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাদের উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’ নদীর প্রবাহ রক্ষায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে এখনই কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। বরিশাল পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) জেলা সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী একটি নদীর জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে তীরবর্তী ১০ ফুট জয়গাকে ফোরশোর বলা হয়। এ ১০ ফুট এলাকার মধ্যে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা তীর দখল করতে পারবে না, যদি ওই জমি কারোর নিজেরও হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা এবং যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কীর্তনখোলার প্রবাহ স্বাভাবিক ও তীর দখলমুক্ত রাখতে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা অবিলম্বে গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’ অভিযুক্ত দখলদার রাইভিউল কবির স্বপন বলেন, নদীতীরে তিনি তার নিজের রেকর্ডীয় জমি রক্ষার জন্য গাইডওয়াল নির্মাণ করেছেন। নদীর মধ্যে আরও রেকর্ডীয় জায়গা রয়েছে তার। এ কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নদীতীরে তার জমি পরিমাপ করে সীমানা পিলার স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু দুই বছরেও জেলা প্রশাসন সীমানা পিলার স্থাপন করে দেয়নি। নদীতীরে নিজের রেকর্ডীয় সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য অবিলম্বে সীমানা পিলার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক) শহিদুল ইসলাম বলেন, নদীতীরে কারও ব্যক্তিগত জমি হলেও আইন অনুযায়ী তিনি সেখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না। পাকার মোড় এলাকায় নদীর অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর