শিরোনাম
বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

উচ্চঝুঁকিতে রাজশাহী খুলনা

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে হুহু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও খুলনা

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর মৃত্যু ও সংক্রমণে শীর্ষে উঠে এসেছিল রাজশাহী। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এক দিনে সর্বোচ্চ ২২ জন পর্যন্ত মৃত্যু ঘটে এখানে। এবার করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতে আবারও উচ্চঝুঁকিতে পড়েছে এ বিভাগীয় শহর। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে হুহু করে বাড়ছে সংক্রমণ। এরই মধ্যে নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। করোনার মরণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মধ্যেই হাজির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। এজন্য আবারও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রাজশাহীতে।

গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কোনো মৃত্যু ঘটেনি। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। সকালে রামেক হাসপাতালের দৈনন্দিন প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সর্বশেষ সোমবার রাজশাহীতে থাকা দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাবে মোট ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং তারা সবাই রাজশাহী জেলার অধিবাসী। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে বর্তমানে রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা আগের সপ্তাহের সংক্রমণের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গেল ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হয়ে বা করোনা উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। করোনা ইউনিটে থাকা ১০৪ শয্যার বিপরীতে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩০ জন ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার ১৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়, নওগাঁর তিন, নাটোরের এক ও পাবনার দুজন। এ ৩০ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ ১৬ জন। উপসর্গ আছে আটজনের। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত হয়নি এমন আছেন ছয়জন। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) নাজমা আক্তার জানান, হঠাৎই সংক্রমণ বাড়ছে। আর বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহীতেই করোনার সংক্রমণ বেশি। এরই মধ্যে রাজশাহী ও নাটোর জেলাকে হলুদ জোনের (মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ) আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ায় বিভাগের অন্য জেলায়ও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খুলনায় করোনা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে : খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গত ১১ জানুয়ারি ১০ জেলায় ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৫১ জন। শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ০৪। ১৬ জানুয়ারি শনাক্ত বেড়ে হয় ৮৯ জন। এ ছাড়া ১৭ জানুয়ারি ১৭৭ জন ও ১৮ জানুয়ারি ১৫৮ জন শনাক্ত হয়। বর্তমানে শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এ সময় মোট আক্রান্ত হয়েছে ৭০২ জন, মারা গেছেন তিনজন। শুধুমাত্র খুলনা জেলায় এক সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছে ১৯১ জন। এদিকে জনসংখ্যা অনুপাতে আক্রান্তের আধিক্য বিবেচনায় খুলনা বিভাগের চারটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। করোনার বিস্তার ঠেকাতে এসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বাড়তি নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুরশিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, জনসংখ্যার অনুপাতে আক্রান্তের হার বিবেচনায় বিভাগের খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে। এ জেলার সিভিল সার্জন ও স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।  তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়লে খুলনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আরও চিকিৎসক ও নার্স নিযুক্ত করা হবে। এর মধ্যে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসক দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব চিকিৎসক কর্মক্ষেত্রে যোগ দিলে সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সহজ হবে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক রবিউল হাসান বলেন, ২০০ শয্যার ডেডিকেটেড ইউনিটে বর্তমানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৭ জন। এদের মধ্যে মুমূর্ষু দুজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, ওমিক্রনের শঙ্কা থেকে চিকিৎসক ও নার্সসহ করোনা চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানে বর্তমানে যে জনবল আছে, তাতে ১০০ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু রোগী এর বেশি হলেই আরও চিকিৎসক-নার্স প্রয়োজন হবে।

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, শনাক্ত বাড়লেও খুলনায় অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মার্কেটে দোকানে পথে ঘাটে উপচে পড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্বের বালাই সেখানে। এ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর