বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

এলপিজিতে আস্থা বাড়ছে গ্রাহকের

♦ অর্ধকোটির বেশি গ্রাহক ♦ বিনিয়োগ ৩২ হাজার কোটি টাকা

জিন্নাতুন নূর

প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে এ আশঙ্কা থেকে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে সরকার আবাসিক খাতে পাইপলাইনে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। আবার পুরনো গ্রাহকরাও গ্যাস সংকটে স্বস্তিতে নেই। গ্যাসের স্বল্প চাপে এখন অনেক পরিবারই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দিকে ঝুঁকছে। শিল্পকারখানায়ও একই অবস্থা। আর প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বৃৃদ্ধির জন্য অনেক গ্রাহকই মনে করছেন, বেশি দাম দিয়েও যদি কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া না যায় এর চেয়ে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করাই ভালো। অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যাসের পর বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডারের প্রতি গ্রাহক আস্থা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশে এলপিজির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। আর চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পাল্লা দিয়ে বড় হচ্ছে এলপি গ্যাসের বাজার। রান্নার পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য এবং যানবাহনেও এখন এলপিজির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে অর্ধকোটির বেশি গ্রাহক এলপিজি ব্যবহার করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে এখন সম্ভাবনাময় খাত এলপি গ্যাস। এ খাতে এরই মধ্যে ৩২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়ে গেছে। শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসায় এবং মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার কারণে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে মাটির চুলার পরিবর্তে এলপিজির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জানা যায়, এক দশক ধরে দেশের বাজারে এলপিজির ব্যবহার প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল পর্যন্ত এলপিজির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৭০ লাখ টনে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে সরকারিভাবে বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টন এলপিজি আমদানির চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালে এলপি গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন এলপি গ্যাস কোম্পানির মধ্যে ২৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার  নিয়ে শীর্ষে আছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশে ১২ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৫ কেজি মাপের সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বাসাবাড়িতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার। কথা হলে মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা শেফালী খাতুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বেশ কয়েক মাস ধরে লাইনে গ্যাসের চাপ কম। মাস শেষে গ্যাস বিল দিয়েও কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছি না। ফলে এলপি সিলিন্ডার ব্যবহার শুরু করেছি। ১২ কেজি সিলিন্ডার দিয়ে চারজনের পরিবারে মাস পার করে দেওয়া যায়।’ তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় দাম কোনো কোনো মাসে আগের মাসের চেয়েও কম হয়।

এলপিজি অপারেটরস  অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) তথ্যমতে, দেশে মোট ৫৬টি কোম্পানি এলপিজি ব্যবসার জন্য লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি বর্তমানে ব্যবসা করছে। ২০টি কোম্পানি সরাসরি আমদানি করছে। আর এ খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত বছর ১২ লাখ টন এলপিজি সরবরাহ করা হয় বাজারে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে বেসরকারি খাত। বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের হেড অব সেলস প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এলপিজি খাতের সম্ভাবনা আছে আবার চ্যালেঞ্জও আছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ৩২ হাজার কোটি টাকার যে বিনিয়োগ হয়ে গেছে তা ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। রাজধানী ঢাকায় গ্যাসের লাইন থেকে যে অগ্নিকান্ড ঘটছে এর বেশির ভাগই প্রাকৃতিক গ্যাসের লাইন থেকে। কারণ এ লাইনগুলোর বেশির ভাগই জীর্ণশীর্ণ। সে তুলনায় এলপিজি ব্যবহার করা নিরাপদ। এ ছাড়া এ গ্যাস চাওয়া মাত্রই সব জায়গায় পাওয়া যায়। গ্রাহকদের ঘরে এসে এ গ্যাস দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একজন যতটুকু চান ততটুকুই ব্যবহার করতে পারছেন এবং সে অনুপাতেই টাকা দিচ্ছেন। এজন্য এলপি গ্যাসের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ লোয়াবের প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এলপি গ্যাসের প্রতি গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে এ কথা সত্য। কারণ প্রাকৃতিক গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে আবার সরকার এ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। যদি একজন গ্রাহক একটি গ্যাস সিলিন্ডার ১১০০ টাকায় কেনেন এটি দিয়ে তার এক মাস চলে যায়। কিন্তু সরকার এখন দুই চুলার দাম ২ হাজার টাকা করার চিন্তাভাবনা করছে। এতে এলপি গ্যাস গ্রাহকের জন্য সাশ্রয়ী হবে। আবার অনেক জায়গায় প্রচুর অর্থ খরচ করে পাইপলাইন বসিয়েও এখন পর্যন্ত গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পাননি। আর এলপি গ্যাস ছাড়া এত দ্রুত এ বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটি ধরে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নীতিগত বিষয়ে সহযোগিতা লাগবে। খালি সিলিন্ডারগুলো স্ক্যাপ করার সময় দুর্ঘটনা এড়াতে তা রিগ্যাসিফিকেশন করতে হবে। ক্রস ফিলিংয়ের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর