বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১৫ জনের পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ১৫ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর ইন্সপেকশন অ্যান্ড অডিট (ডিআইও) দফতর। এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত রিপোর্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পাঠিয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের আলাদা দুই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ তদন্ত করে ডিআইও।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান জানান, ডিআইও থেকে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনটি তিনি এখনো পুরো পড়ে দেখেননি। যেটুকু দেখেছেন, তাতে কিছু আর্থিক ক্ষতির কথা বলা আছে। এ ছাড়া পদোন্নতি পাওয়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে। বোর্ড সভায় প্রতিবেদনটি তুলে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বছরের ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সরেজমিন এসব নিয়ে তদন্ত করে। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্র জানায়, লিখিত পরীক্ষা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ছাড়াই শুধু সিলেকশন কমিটির মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ১৫ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। শিক্ষা বোর্ডের সাবেক দুই চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও অধ্যাপক মোকবুল হোসেনের সময় এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। দুই দফায় ১৫ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে নানা অনিয়ম করেছেন তারা। সিলেকশন কমিটিও প্রথমে নিয়ম না মেনে নয়জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল বলে তদন্তে ওঠে এসেছে।

সিলেকশন কমিটির মৌখিক পরীক্ষার পর ৪৮ জনের মেধাতালিকা করা হয়। সিলেকশন কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ওই ৪৮ জনের মধ্যে প্রথমে ২০১৭ সালের ৯ জুলাই নয়জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই নয়জন হলেন- উপকলেজ পরিদর্শক নেসার উদ্দিন আহমেদ, উপবিদ্যালয় পরিদর্শক মানিকচন্দ্র সেন, উপসচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ ও রেকর্ডস) মুঞ্জুর রহমান খান, ক্রীড়া কর্মকর্তা লিটন সরকার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, অডিট কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) জাহিদুর রহিম ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উমা) হোসনে আরা আরজু। তাদের পদোন্নতি দিতে সিলেকশন কমিটি ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে ৪৮ জন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। কমিটির সভাপতি ছিলেন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

ওই মেধাতালিকা থেকে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন আরও ছয়জনকে পদোন্নতি দিতে চিঠি ইস্যু করেন। এই ছয়জন হলেন- উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেএসসি) ফরিদ হাসান, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (স্ক্রিপ্ট) রুবী, উপসচিব (ভান্ডার) দুরুল হোদা, উপসচিব (প্রটোকল) খোরশেদ আলম, উপবিদ্যালয় পরিদর্শক (রেজি.) মো. নুরুজ্জামান ও লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা সুলতানা শারমিন আক্তার।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে, উচ্চ আদালতের এক পর্যবেক্ষণে চারটি মানদন্ডের ভিত্তিতে পদোন্নতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু শুধু মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ওই মেধাতালিকাটি করা হয়। বোর্ডে ৪৮ কর্মকর্তার কোনো বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনও নেই। তবে কারও কারও সার্ভিস বুক চালু আছে। তদন্ত কমিটি দেখেছে, সার্ভিস রেকর্ডে নিয়মিত তথ্য সংযোজন করা হয় না। সার্ভিস রেকর্ডে ফ্লুইড ব্যবহার করে ঘষামাজাও আছে, যা সার্ভিস রুলের পরিপন্থী।

সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি যে ছয়জনকে পদোন্নতি দিয়েছিলাম, তা পরে স্থগিত করেছি। বোর্ডের কোনো আর্থিক ক্ষতি হয়নি।’ সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই পদোন্নতি দিয়েছি। এখন তদন্ত কমিটি কি অনিয়ম পেয়েছে সেটি জানি না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর