মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

পর্দা নামল বাণিজ্য মেলার

বিক্রি ১৩৭ কোটি টাকার

জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

শেষ হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। গতকাল বাণিজ্য মেলার পর্দা নামে। ঢাকার বাইরে এবারই প্রথম পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠিত হয় এবারের বাণিজ্য মেলা। গতকাল শেষ দিনেও মেলায় ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর অধীনে এবারের  বাণিজ্য মেলায় ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া এ মেলায় আরও প্রায় ৪০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। গতকাল বিকালে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে। অনুষ্ঠানে মেলায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১২ ক্যাটাগরিতে ৪২ জন্য অংশগ্রহণকারী, বিভিন্ন দফতরের ১০ জন কর্মকর্তা ও ২৭ সংস্থাকে পদক দেওয়া হয়েছে। বিকালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান স্বাগত বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী  গোলাম দস্তগীর গাজী ব?লেন, দেশ সর্ব?ক্ষে?ত্রে এ?গি?য়ে যা?চ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যা?চ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। ২০৪১ সালের আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সার্বিক অর্থনীতি দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের কারণে কভিড-১৯ পরিস্থি?তিতেও দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতি সচল রয়েছে। এক সময় বিদ্যুতের অভাবে দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আজ বাংলাদেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অনেক প্রতিকূল এবং নতুন ক্যাম্পাসে এবারের বাণিজ্য মেলা খুবই সফল হয়েছে।

বি?শেষ অ?তি?থির বক্ত্যবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব?লেন, ‘অনেক প্রতিকূল পরিবেশে এবারের বাণিজ্য মেলা শেষ হলো। দেশের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ বছর ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ২০২৪ সালে দেশের রপ্তানি ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। তখন এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে আমাদের অনেক বাণিজ্য সুবিধা থাকবে না। আমাদের প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে। তখন পিটিএ অথবা এফটিএ স্বাক্ষর করে বাণিজ্য সুবিধা নিতে হবে। চলতি বছর আমরা চারটি দেশের সঙ্গে এ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য কাজ করছি।’

এদিকে মেলার শেষ দিনেও দর্শনার্থী-ক্রেতার ছিল উপচে পড়া ভিড়। শেষ দিনে বিশেষ মূল্য ছাড়ে পণ্য কিনবেন বলে অনেকেই মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। ঢাকার ডেমরার হাজী নগর থেকে আসা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘মেলায় মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে ব্লেজার কিনতে পেরেছি।’ অনেকে কাক্সিক্ষত ছাড় না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। ঢাকার পোস্তগোলা থেকে আসা মহব্বত নামে এক ক্রেতা বলেন, মেলায় বিশেষ ছাড়ে একটি টিভি কিনতে এসেছিলাম। ৩২ ইঞ্চি একটি টিভি সাড়ে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে। ১৮ হাজার টাকা বলেছি, দেয়নি তাই ফিরে যাচ্ছি।’

এদিকে নতুন স্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মেলায় বেচাকেনা খুব ভালো হয়নি বলে জানিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। দিল্লি এলুমিনিয়াম প্যাভিলিয়নের সেলসম্যান মো. আরিফ বলেন, ‘আমরা বেচাকেনা মোটামুটি করেছি।’ তবে মেলায় ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্রের বেচাকেনা তেমন ভালো হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১ জানুয়ারি সকা?লে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহ?রের ৪ নম্বর সেক্ট?রে বঙ্গবন্ধু বাংলা?দেশ-চায়না েেফ্রন্ড?শিপ এ?ক্সি?বিশন সেন্টারে ‘২৬তম ঢাকা আন্তর্জা?তিক বা?ণিজ্য?মেলা’ শুভ উদ্বোধন করেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এবারের মেলায় বাংলাদেশসহ মোট ২২টি দেশ অংশ নিয়েছে। এবারের ঢাকা আন্তর্জা?তিক বাণিজ্য মেলায় ছোট-বড় মিলে ২২৫টি স্টলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে হাজির হয়ে?ছিল। এবার মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে ছিল দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কারপেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর