শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পোশাক রপ্তানির পালে হাওয়া

প্রবৃদ্ধি বেড়েছে নিট পোশাকে ৫৬.৫৭, ওভেন পোশাকে ৪৮.১৭ শতাংশ

রুহুল আমিন রাসেল

পোশাকপণ্য রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছে। ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। আর গত ডিসেম্বরে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পোশাকপণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির এ ধারা আগামী ছয় মাস অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন পোশাকশিল্পের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রপ্তানিতে চলমান প্রবৃদ্ধিতে আমরা খুবই আশাবাদী। আশা করছি আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাস পোশাকপণ্য রপ্তানির এ ধারা অব্যাহত থাকবে। যদিও ওমিক্রনের চ্যালেঞ্জও আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি ক্রেতারা। এটাও একটা আশার দিক। সব মিলিয়ে এখন ক্রয়াদেশ অব্যাহত রয়েছে।’ বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশের পোশাকপণ্য রপ্তানির পালে এখন যে হাওয়া লেগেছে, তা আগামী ছয় মাস অব্যাহত থাকবে স্বাভাবিক নিয়মেই। তবে কাঁচামালের দাম সমন্বয় ও ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বা ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস বা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে করোনার ধাক্কা সামলে পোশাক খাতের রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ানোর ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের রপ্তানির তুলনায় বিদায়ী ২০২১ সালের একই মাসে রপ্তানি ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ২০১৯-এর ডিসেম্বরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৩৮ শতাংশ। ২০২১-এর ডিসেম্বর মাসে ৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২১) রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯০  বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের রপ্তানির পরিমাণের চেয়ে ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ বেশি। আর পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিকেএমইএ উপদেষ্টা ও সাবেক প্রথম সহসভাপতি এইচ এম আসলাম সানী বলেন, পোশাকপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির এ ধারা আগামী তিন থেকে চার মাস অব্যাহত থাকবে। বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রপ্তানি উপাত্ত অনুযায়ী পোশাক খাতের রপ্তানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ করা গেলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজারগুলোতে কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। কভিডের সংক্রমণ রোধে ও নিজেদের রক্ষার্থে দেশগুলো বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এর ফলে পোশাকের নতুন ও চলমান রপ্তানি আদেশের ওপর প্রভাব পড়ছে। ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের পোশাক খাতের রপ্তানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে এ রপ্তানি ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশের রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। একক মাস হিসেবে সর্বশেষ ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি উভয়ই লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে। ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার।

 প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এ খাতে রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে নিট পণ্যের (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে ওভেন পণ্যের (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৭৬৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে ডিসেম্বর মাসে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি ৫৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক মাসে ২১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিটওয়্যার পণ্য এবং ওভেন পোশাক ১৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ হাজার ৯২৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে ডিসেম্বর মাসে ৩৯১ কোটি ১২ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। সুতরাং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় গত মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৯৮  লাখ ডলার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর