রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ধানি জমি গিলে খাচ্ছে তামাক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

ধানি জমি গিলে খাচ্ছে তামাক

ধানসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম কম থাকায় রংপুর অঞ্চলে তামাকের আবাদ প্রতিবছরই বাড়ছে। এক বিঘা ধান আবাদ করে কৃষকের সর্বোচ্চ খরচ ১০ হাজার টাকা। অপরদিকে একই পরিমাণ জমিতে তামাক আবাদে খরচ হচ্ছে ১৯ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয় ১৮ মণ আর তামাক পাতা উৎপাদন হয় সাড়ে ছয় থেকে সাত মণ। প্রতি মণ ধান ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করলে ১৬ হাজার ২০০ টাকা কৃষকের ঘরে আসে। অপরদিকে সাত মণ তামাক ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করলে কৃষকের ঘরে আসে সাড়ে ২৯ হাজার টাকা। এক বিঘা ধান বিক্রি করে কৃষকের লাভ হয় ৬ হাজার টাকা। অপরদিকে সমপরিমাণ জমির তামাক বিক্রি করে কৃষকের লাভ হয় ১০ হাজার টাকা। ধান এবং তামাকে বিঘাপ্রতি কৃষকের ৪ হাজার টাকার বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষেই ঝুঁকছেন বেশি করে। ধূমপান বিষপান জেনেও তামাকের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার তামাক চাষি খয়ের উদ্দিন, শামছুল হুদাসহ বেশকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করে অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের চেয়ে খরচ কম হয়। পাশাপাশি লাভ হয় অনেক বেশি। কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, এক সময় শুধু রংপুর জেলায় ৪০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে তামাক আবাদ হতো। সরকারের নিরুৎসাহিতার কারণে এ অঞ্চলে তামাক চাষ কমে গিয়েছিল। তবে কবছর থেকে আবারও কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছে। কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রংপুরের পাঁচ জেলায় এ বছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে।

আগে মতিহার, কালা মতিহার, গোদরা, ডিবি, বাঁশদাহ, ছাতাই মতিহার, বাঁশপাতারী, তালিম, ভার্জিনিয়সহ নানা জাতের তামাক পাতা আবাদ হতো। এখন অনেক স্থানে মতিহার ও জাতি, ডিবি তামাকের চাষ করা হচ্ছে।

তামাক চাষি আ. সাত্তার জানান, গত কয়েক বছর থেকে তামাকের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় তারা তামাক চাষ বেশি করেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় তামাক চাষে খরচ কম, তা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে তামাক গাছের ক্ষতি কম, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ও অনেক ক্ষেত্রে আগাম দাম বেশি পাওয়ায় তাদের অনেই তামাক চাষ করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি আগাম টাকা দিয়ে তাদের তামাক চাষে উৎসাহিত করছেন।

এক সময়ে তামাকই ছিল রংপুর অঞ্চলের প্রধান ফসল। তামাক-সংশ্লিষ্ট দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে এখানকার ভার্জিনিয়া জাতের তামাকের কদর ছিল প্রচুর। তামাককে ঘিরে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিনা পুঁজিতে তামাকের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। সে সময় বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দাসহ তামাক-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এ অঞ্চলে।

এলাকার চাষিদের প্রয়োজনকে সামনে রেখেই তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের সার্ভে অনুযায়ী ১৯০৮ সালে রংপুরের বুড়িরহাটে স্থাপিত হয় তামাক গবেষণা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি সে সময়ে দেশের ভিতর এবং বিদেশ থেকে ১১৪টি তামাকের জাত সংগ্রহ করে। এছাড়া সুরভি ও সুগন্ধি নামক উচ্চ ফলনশীল দুটি জাতসহ নতুন নতুন তামাকের জাত উদ্ভাবন করে।

পরবর্তীতে তামাকের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এর চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে চাষিদের। এর অংশ হিসেবে একসময় তামাক ক্রয়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টোব্যাকো  কোম্পানির (বিটিসি) রংপুর ডিপো বন্ধ হয়ে যায়। তামাক গবেষণা কেন্দ্রটি রূপ পাল্টে পরিণত হয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প হিসেবে ভুট্টা, সূর্যমুখী, সরিষা, বাদামসহ শাকসবজি চাষ করে চাষিরা যাতে তামাকের চেয়ে বেশি লাভ পেতে পারে সে বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ক্ষতিকর তামাকের চাষ বন্ধ হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর