রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

জাতিসংঘে সর্বজনীন টিকা নিশ্চিতের আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘে সর্বজনীন টিকা নিশ্চিতের আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সর্বজনীন টিকা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সাধারণ পরিষদ হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ‘গ্যালভানাইজিং মোমেন্টাম ফর ইউনিভার্সাল ভ্যাকসিনেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক থিমেটিক বিতর্কে তিনি এ আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উৎপাদন প্রযুক্তি ও জ্ঞান অবিলম্বে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিময় করে নেওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশের মতো ওষুধ উৎপাদনে ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলো ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণ করতে পারে।’ উচ্চ পর্যায়ের এ ইভেন্টটি অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ শাহিদের উদ্যোগে। এতে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এবং জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী ও সিনিয়র রাজনৈতিক নেতারা অংশগ্রহণ করেন। কভিড ভ্যাকসিনকে ‘সর্বজনীন বিশ্বসম্পদ’ বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশ এবং উৎপাদনকারীদের অবশ্যই সমতার ভিত্তিতে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে কভিড টিকার বৈশ্বিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

ড. মোমেন বলেন, বিশ্বব্যাপী টিকার চাহিদা মেটাতে এর উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে এবং বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ব সম্প্রদায়কে টিকাবিষয়ক ভুল তথ্য ও টিকা জাতীয়করণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বাংলাদেশে কভিড মোকাবিলা ও এর ব্যবস্থাপনায় সরকার সময়োপযোগী যেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী এবং নাজুক জনগোষ্ঠীকে সরাসরি নগদ অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন ও জীবিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য নিশ্চিত করাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ১০১ মিলিয়নের বেশি মানুষ কভিড টিকার অন্তত একটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। কভিড মহামারির কার্যকর মোকাবিলায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশকে (প্রায় ১৩২ মিলিয়ন) টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’

ড. মোমেন বলেন, বিশ্বসম্প্রদায়কে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। সর্বজনীন টিকা নিশ্চিত করতে এবং মানুষের জীবন ও বিশ্বের অর্থনীতি বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতিসংঘ চলতি অধিবেশনের সভাপতি আবদুল্লাহ শাহিদ বলেন, করোনার টিকা বিতরণে যে বৈষম্য চলছে এর ফলে মহামারি রোধে প্রত্যাশিত সুফল আসছে না। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবতার স্বার্থে এ বৈষম্য অবসানে আন্তরিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আবদুল্লাহ শাহিদ উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিন বিতরণে বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা অনৈতিক ও বাস্তবসম্মত নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ কোটি ৮৫ লাখে দাঁড়িয়েছে এবং এদিন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৯ লাখ মানুষ। আবদুল্লাহ শাহিদ বলেছেন, এযাবৎ ১০ বিলিয়ন ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। অথচ আফ্রিকার কোনো কোনো অঞ্চলের ৮৩ শতাংশ মানুষ এখনো সে টিকা চোখে দেখেনি। এ অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না যে এখন পর্যন্ত ২৭ দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষও টিকা পায়নি।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় বলেন, টিকা নিয়ে অসমতার মনোভাব হচ্ছে এ সময়ের সবচেয়ে বড় অপরাধ। কারণ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, অর্থনীতি ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।

একই দিন জাতিসংঘ সদর দফতরের ইন্দোনেশিয়া লাউঞ্জে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রীর মধ্যে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন কানাডার মন্ত্রী হারজিত সজ্জনের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার চলমান পরিস্থিতি বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কানাডার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। সজ্জন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কানাডার সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন।

কানাডায় পলাতক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও কানাডা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। তিনি কানাডার মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। কানাডার মন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং অচিরেই বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে সরকারি সফরে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন। ১ মার্চ তিনি জাতিসংঘের মহীসোপান সীমাবিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) বাংলাদেশের এ-সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্যাদি উপস্থাপন করবেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর