মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

অনাবাদি জমিতে ফলবে ফসল

সিলেটে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট বিভাগে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৩ লাখ ২২ হাজার ৭৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে চাষাবাদ হয়ে থাকে ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৮ হেক্টর। অর্থাৎ আবাদযোগ্য জমির প্রায় ৪০ শতাংশই পড়ে আছে পতিত। বিপুল পরিমাণ এই অনাবাদি জমিতে ব্যাপক কৃষি সম্ভাবনা দেখছে কৃষিবিভাগ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিলেটের পতিত জমির ব্যবহার ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি, হাওর-বিলের আবাদযোগ্য জায়গা এবং প্রবাসী মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ ভূমি সিলেটে বছরের পর বছর অনাবাদী হিসেবে পড়ে আছে। কৃষিপ্রযুক্তির দুষ্প্রাপ্যতা, কৃষকদের প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাব, সেচ সংকট ও পুঁজির অভাবে এই জমি চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। এই অবস্থায় সরকার সিলেটের অনাবাদি জমিকে আবাদের আওতায় আনতে ২০০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পের আওতায় পতিত জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার ও শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন, কৃষকের আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং পুষ্টি ও সামাজিক ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন করা হবে।

২০২৬ সালের জুন মাস নাগাদ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হবে। ইতোমধ্যে একনেকের সভায় প্রকল্পটি পাশ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ৪০টি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় শুরুতেই বাছাই করে ৮ হাজার ১৭৮টি ব্যাচে কৃষক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন কৃষক থাকবেন। ৯৫ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন কর্মকর্তা থাকবেন। এতে ৪৭ হাজার ৯৭৯টি বিভিন্ন ফসল ও ফলের জাত প্রদর্শনী এবং ৪০টি পলিশেড হাউজ প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। ১ হাজার ৭৭৭টি ফিতা পাইপ সেট, ৫০০টি এলএলপি, ৩৫৫৪টি স্প্রেয়ার, ১ হাজার পাওয়ার স্প্রেয়ার, ১৭৭৭টি ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র কেনা হবে। ১২০টি সফরও রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের আওতায় ১২০টি কৃষি মেলা ও ৫টি কর্মশালাও আয়োজন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন তার মতামতে প্রকল্পটি সম্পর্কে বলেছে, বৃহত্তর সিলেটের পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা, জলবায়ুর ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম লাগসই কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে শস্যের নিবিরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট অঞ্চলের বহু জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। এর মধ্যে অনেক জমির মালিকরা দেশে থাকেন না। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে এসব জমিতে উৎপাদিত ফসল জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

এদিকে, সিলেটে দিন দিন কমছে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ। আবাদযোগ্য কৃষি জমি কমার সঙ্গে সিলেটে বাড়ছে স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণও। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি তৈরি, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে গত এক যুগে সিলেটে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে ৩৫ হাজার ২১৫ হেক্টর। আর স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ। কৃষি জমি রক্ষায় আইন ও নীতিমালা থাকলেও মনিটরিংয়ের অভাবে এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর