শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানোর তোড়জোড় বিরক্ত পর্যটকরা

রাহাত খান, বরিশাল

ধীর গতিতে চলছে দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। দ্বিতীয় দফায় এক বছর সময় বাড়ানোর পরও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬০ ভাগ। নতুন করে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। ওই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাঁধ উন্নয়ন ও সাড়ে ৭ মিটার উঁচুকরণ ও স্লোপ প্রোটেকশন নির্মাণ করে রঙের ছোঁয়ায় সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, লতাচাপলী এলাকা ঘিরে ৩৮ কিলোমিটার রিং বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটকবান্ধব হয়ে উঠবে সাগর কন্যা কুয়াকাটা। এতে এই অঞ্চলের পর্যটন অর্থনীতি আরও চাঙা হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সাগর তীরবর্তী সবুজ বেষ্টনী উজাড় করে বাঁধ উন্নয়নের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, লতাচাপলী, গঙ্গামতি, মিস্ত্রিপাড়া, লেমুরচরসহ সাগর তীরবর্তী ৩৮ কিলোমিটার এলাকায় ৬ মিটার উঁচু পুরনো মাটির বাঁধ সাড়ে ৭ মিটারে উন্নীতকরণ, সৈকতের ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও ৩৫ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন কাজের দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিকো। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় এ কাজটি চলছে।

১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরপর এক বছর সময় বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ ভাগ। দ্বিতীয় দফায় আরও এক বছর সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আবার সময় বাড়ানোর পরও নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এদিকে কাজটি বিলম্বিত হওয়ায় ১০ কোটি টাকা বেড়ে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি টাকায়। যথাসময়ে কাজটি শেষ না হওয়ায় কুয়াকাটা সৈকতের ভগ্নদশায় বিরক্ত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। সৃষ্টি হচ্ছে নানা দুর্ভোগের। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক মো. মজিবর রহমান বলেন, করোনাসহ নানা কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এক দফা সময় বাড়ানোর পর আরেক দফা সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বরিশালের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, ৮০ ভাগ এঁটেল মাটি এবং ২০ ভাগ বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও মাটি না পাওয়ার অজুহাতে ৮০ ভাগ বালু এবং মাত্র ২০ ভাগ মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাঁধের স্থায়িত্ব হুমকিতে পড়েছে।

পরিবেশ ফেলো মুরাদ আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সৈকত লাগোয়া সবুজ বেষ্টনী উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের নামে সৈকত সংলগ্ন গঙ্গামতি এলাকায় বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া হাজার হাজার গাছ কেটে সেখানকার মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

কুয়াকাটা ছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন, খাল খনন ও পুনঃখনন এবং স্লুইস নির্মাণ কাজ চলছে বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, ভান্ডারিয়া ও গলাচিপায়। সবগুলো প্যাকেজের কাজ চলছে ধীরগতিতে।

সর্বশেষ খবর