শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ার দইয়ের কদর সবার কাছে

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার দইয়ের কদর সবার কাছে

অতিথি আপ্যায়ন কিংবা রসনা তৃপ্তি করে প্রিয়জনের মন ভোলাতে বগুড়ার দইয়ের বিকল্প নেই। দইয়ের স্বাদ না নিয়ে বগুড়া ছাড়া কষ্টসাধ্য। বগুড়ার কোনো ভোজ উৎসবে খাদ্য তালিকায় দই নেই এমন কেউ ভাবতেই চান না। হোক সে অতিদরিদ্র কিংবা শহরের কোনো ধনী পরিবার। বগুড়ার দই দিন দিন হয়ে উঠেছে আত্মীয়তার সেতুবন্ধ। দইকে কেন্দ্র করেই বগুড়া পেয়েছে নতুন পরিচিতি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দই এখন দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বগুড়ার দইয়ের কদর সবার কাছে। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বাঙালিকে না ভালোবাসলেও বাঙালির দইকে ভালোবাসতেন। জানা যায়, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে বগুড়ায় এসে তিনি দই খেয়েছেন। পরে বন্ধুত্ব পাতাতে পৃথিবীর বাঘা বাঘা লোকদের সে দই খাইয়েছেন। বগুড়ার দই খেয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও। পৃথিবীর অনেক জায়গার মানুষই বগুড়ার দই খেতে পছন্দ করেন। আর দেশের মানুষ তো বগুড়ার দই বলতে পাগল।

বগুড়ার প্রবীণরা জানান, দইয়ের শুরুটা হয়েছিল শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলায়। কথিত আছে, উনবিংশ শতাব্দীর ৬০-এর দশকের দিকে গৌর গোপাল পাল নামে এক ব্যবসায়ী প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সরার দই তৈরি করেন। তখন দই সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা ছিল না। গৌর গোপালের এ দই-ই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানী পরিবারের কাছে এ দই সরবরাহ করতেন গৌর গোপাল। সে সময় এ দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ির দই। নবাবি আমলে বিশেষ খাবার ছিল এ দই। কালে কালে দিন গড়িয়ে গেলেও এখনো বিশেষ খাবার হিসেবে মর্যাদা ধরে রেখেছে দই। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, আকিকা, হালখাতা বা পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানে দই বিশেষ খাবার হিসেবে পরিবেশিত হয়।

বর্তমানে বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়ার দই, এশিয়া সুইটমিট ও এনাম দইঘর, নবাববাড়ির রুচিতা, বিআরটিসি মার্কেটের দইবাজার, মিষ্টিমহল, মহরম আলী, শেরপুর দইঘর, চিনিপাতাসহ অর্ধশতাধিক শোরুমে দই বিক্রি হচ্ছে। আবার শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত দইঘর, শেরপুরের রিপন দধিভান্ডার, সাউদিয়া, জলযোগ, শম্পা, বৈকালী ও শুভ দধিভান্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হয়।

বগুড়ার দই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দই পাওয়া যায়। যার প্রতি পাতিল বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ২৫০ টাকায়। ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মাটির পাত্রে দই ভরানো হয়। আগে কেজি হিসেবে দই বিক্রি হলেও এখন উপকরণের মূল্য বাড়ায় বিক্রি হয় পিস হিসেবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ বগুড়া এলে এখানকার দইয়ের স্বাদ নেন। তবে দইয়ের ওজন ঠিক থাকে না। বগুড়া শহরের চিনিপাতা দই দোকানে মেজবান দই ২৬০, স্পেশাল দই ২৪০, সাদা দই ২২০, টকদই বড় পাতিল ১৬০ ও ছোট পাতিল ৮০, কাপ দই ৪৫, ক্ষীরসা সরা ৫০০, স্পেশাল বাটি দই ২৪০ টাকা করে প্রতি পিস বিক্রি হয়। প্রায় একই দামে বগুড়ার সব দোকানেই দই বিক্রি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর