মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগার বন্ধ থাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে চাহিদা অনুযায়ী জ¦লানি তেল না আসায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে সিলেটের অনেক রিফুয়েলিং স্টেশন জ্বালানি সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি সরবরাহসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামছেন সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। আগামীকাল থেকে তারা আন্দোলনে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ‘সিলেট বিভাগীয় পেট্রোলপাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ ঘোষিত ৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ, গ্যাসের লোড বৃদ্ধি, সিএনজি পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম বন্ধ করা, বন্ধ থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত শোধনাগার পুনরায় চালু ইত্যাদি। সিলেটের জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলায় ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিন মিলিয়ে প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটার।

আগে সিলেটের গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত উপজাত দিয়ে স্থানীয় শোধনাগারগুলোর মাধ্যমে পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠানো হতো।

কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে বিএসটিআইর মানসম্পন্ন জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না- এমন অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সিলেটের ছয়টি শোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছয়টি শোধনাগারের মধ্যে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট দিয়ে প্রতিদিন গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড-আরপিজিসিএলের দুটি প্ল্যান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাসটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্ল্যান্টে যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫০ ও ৪ হাজার ব্যারেল পেট্রোল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো।

সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর গ্যাসক্ষেত্র থেকে উপজাত হিসেবে পাওয়া কনডেনসেটগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি শোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। সেখান থেকে রেলের ওয়াগনে করে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিন সিলেটে এনে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এ তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো। সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই দেখা দেয় জ্বালানি সংকট। এ নিয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করলে গত বছরের ১০ মার্চ সিলেটে আসেন বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি সংস্কারের মাধ্যমে সিলেটের সব কটি শোধনাগার চালুর আশ্বাস দিলেও শুধু রশিদপুরের প্ল্যান্টটি চালু হয়। বাকিগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে।

শীত মৌসুমে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই সংকট নিরসনের দাবি জানিয়ে গত রবিবার জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেন ‘সিলেট বিভাগীয় পেট্রোলপাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র নেতৃবৃন্দ। ওই কর্মসূচিতে তারা সমস্যা সমাধান না হলে ৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল সিলেট নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ওই সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা।

পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস্ অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। ডিজেল আসলে পেট্রোল আসে না। পেট্রোল মিললে অকটেন মিলছে না- এভাবেই চলছে পাম্পগুলো। বর্তমানে ডিজেলের অভাবে অনেক পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে বারবার সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর