শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিএনসিসির নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা বিস্তারের উদ্যোগ

হাসান ইমন

অবশেষে সিটি করপোরেশনের সুবিধা পেতে যাচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নতুন ১৮ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। শিগগিরই এসব ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ শুরু করবে সংস্থাটি। নাগরিকের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী রাস্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, খেলার মাঠসহ আধুনিক নগরীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করলে এ ওয়ার্ডগুলো হবে আধুনিক নগরী।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অঞ্চল ও নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করতে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন এসব ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাস্তবায়িত করলে এগুলো হবে আধুনিক নগরী।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এ কাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪ হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। তবে এরই মধ্যে আমরা হাতে পেয়েছি ৮০ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, নতুন ১৮ ওয়ার্ডের কাজ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বাস্তবায়ন হবে। এখানে আধুনিক নগরীর সব ধরনের সুবিধা থাকবে। রাস্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ডিএনসিসি কর্মকর্তারা জানান, ডিএনসিসির নতুন ১৮ ওয়ার্ডকে নিয়ে অ্যাকশনপ্ল্যান করেছে সংস্থাটি। পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। এই প্ল্যানে রাস্তা, ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা কেন্দ্র, শরীরচর্চা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাদুঘর ও নাট্যমঞ্চ, খেলার মাঠ, পার্ক, পশু জবাইখানা, গণশৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই প্ল্যান অনুযায়ীই প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হচ্ছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হলো জমি অধিগ্রহণ ও ভবন উচ্ছেদ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জমি অধিগ্রহণে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। আমরা আশাবাদী নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা উন্নয়ন কাজে এগিয়ে আসবেন। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নতুন ওয়ার্ডে ১৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও ফুটপাথ উন্নয়ন করা হবে। এরই মধ্যে প্রধান সড়কগুলো চার লেনের সড়ক হবে ১০টি। সব রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমমুখী হবে। যার দূরত্ব হবে ৩৩ কিলোমিটার। দুই লেনের সড়ক হবে ৪০ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবলসহ অন্যান্য তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্য নির্মাণ করা হবে ৯৭ কিলোমিটার ইউটিলিটি ডাক্ট (টানেল)। এই খাতে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া ২৩৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫১ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ওয়ার্ডগুলোতে ১৩টি খাল রয়েছে। খালগুলো হলো- স্মৃতিভোলা খাল, গজারিয়া, বাগারপুল, বাঙলাবান্ধা, জিয়া, সমুদ্র, ডুমনি, বেরাইদ, সেনতি, বগুরখালি ও শত বেরাইদ খাল। এসব খালের দৈর্ঘ্য ২৮ দশমিক ৫১ কিলোমিটার। এই খালগুলোর উভয় পাশে ৫৮ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সাইকেল লেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৫৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া ১২ হাজার ২১৮টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আর জমি অধিগ্রহণ করা হবে ৬৯ দশমিক ৪৮ একর। যার পেছনে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক। আর এসব উন্নয়ন কাজ হবে ১১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে। নতুন ১৮ ওয়ার্ডকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, মাস্টারপ্ল্যানে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ড্রাফট স্ট্রকচার প্ল্যান (২০১৬-৩৫), ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ, সুয়ারেজ ও ওয়াটার মাস্টারপ্ল্যান, ঢাকা যানবাহন কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনাগুলো (আরএসটিপি) পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যেন কোনো কিছু সাংঘর্ষিক না হয় সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর