সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ঢাকায় মশা নিধনে পাঁচ উদ্যোগ ব্যর্থ

চার বছরে ব্যয় ১৫৪ কোটি টাকা । বিজ্ঞানভিত্তিক প্রদক্ষেপ নিতে হবে : কীটতত্ত্ববিদ

হাসান ইমন

মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) গত চার বছর পাঁচ অভিনব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এগুলোর পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচও করেছে তারা। কিন্তু কোনোটির সুফল মেলেনি। এদিকে মশা নিধন কাজে গত চার বছরে ১৫৪  কোটি টাকা খরচ করেছে সংস্থা দুটি। এতেও মশা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাঙ ও হাঁসের কার্যকর কোনো ভূমিকা পৃথিবীর কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি। তবে গাপ্পি মাছ কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সফল একটি পদ্ধতি। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় এ মাছ ছেড়ে সফলতাও পাওয়া গেছে। যদি মেরে ফেলা না হয় তাহলে এটি খুব কার্যকর উদ্যোগ। তবে তেলাপিয়া মাছ খুব নোংরা পানিতে বাঁচে না। এ ক্ষেত্রে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে এই মাছ অবমুক্ত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক বছরব্যাপী সম্মিলিত মশক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এডিস ও কিউলেক্স মশার জন্য আলাদাভাবে এ ব্যবস্থাপনা চালাতে হবে। তবে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ড্রেন ও নর্দমাগুলো আগে পরিষ্কার করতে হবে। পরে এসব স্থানে লার্ভিসাইড ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই মশার লার্ভা ধ্বংস হবে। এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে বুধবার থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। এ অভিযানে ৮৯৬ জন মশক কর্মী অংশ নিয়েছেন। সকাল ও বিকাল দুই বেলাই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থাকে চিঠি দিচ্ছি।’ এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‘মশা নিধনে জলাশয়ে হাঁস ও ব্যাঙ অবমুক্ত করা হয়েছে। এগুলো এখনো আছে। এ ছাড়া মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ১৪ জন মশক কর্মী রয়েছে। তারা সকাল-বিকাল ওষুধ স্প্রে করছে। আর এ ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে খাল ও জলাশয় পরিষ্কার কার্যক্রম চলছে। দুই সিটি সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন ব্যয় করেছে ১৫৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ৭৮ কোটি ৫৪ লাখ এবং ঢাকা উত্তর ৭৬ কোটি টাকা। এত টাকা খরচ করেও মশা থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী। এদিকে ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে ঝিল, লেক, পুকুর ও জলাশয়ে ২০ হাজার ব্যাঙের পোনা ছাড়ে ডিএসসিসি। ব্যাঙের পোনা আনতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা বলে ডিএসসিসি ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস। এসব ব্যাঙের পোনা অবমুক্ত করণে তাদের পরিকল্পনা ছিল এসব ব্যাঙাচি বড় হয়ে মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে; কিন্তু সে পরিকল্পনাও তেমন কাজে আসেনি। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও কিউলেক্স মশার উৎপাতেও অতিষ্ঠ হয় নগরবাসী। এর আগে ২০২০ সালে ১৪ জুন মশার লার্ভা ধ্বংসে রমনা পার্ক লেকে হাঁস আর খিলগাঁও বটতলা ঝিলে তেলাপিয়া মাছ অবমুক্ত করে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। কিন্তু তদারকির অভাবে অধিকাংশ হাঁস চুরি ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তবে এখনো কিছু হাঁস ঝিলে রয়েছে। তবে কী পরিমাণ রয়েছে হিসাব নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে হাঁস পালন শুরু করা হয়েছিল তার সুফল মেলিনি।

এ ছাড়া ২০১৭ সালের শেষ দিকে এসে ‘গাপ্পি’ দিয়ে মশক নিধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা বাস্তব রূপ পায় ২০১৮ সালে। ওই বছরের ২০ মার্চ অঞ্চল-৪-এর কাজী আলাউদ্দিন রোডের বেশ কয়েকটি নর্দমায় ১০ হাজার গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করেন ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। এ গাপ্পি মাছের পেছনে খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা ও হাঁস পালনে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অন্যদিকে গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশা মারতে ড্রোন নিয়ে আসে। ড্রোনের মাধ্যমে খাল, জলাশয়সহ দ্রুত মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেয়। এতেও সুফল মেলেনি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে মশক নিধনের কাজে ব্যবহারের জন্য একটি কোম্পানি ডিএনসিসিকে কিছু ড্রোন দিয়েছিল বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর