মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বই পায়নি বরিশালের হাজারো শিক্ষার্থী

রাহাত খান, বরিশাল

বছরের প্রথম তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত নতুন বই হাতে পায়নি বরিশালের দুটি উপজেলার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এতে তাদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে চরমভাবে। সন্তানরা যথাসময়ে বই না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এদিকে শতভাগ শিক্ষার্থীকে নতুন বই দিতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতে নানা গোঁজামিল তথ্য দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে সারা দেশে বই উৎসব রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার এ নিয়ম রক্ষা করতে পারেনি বরিশাল শিক্ষা বিভাগ। খোদ বরিশাল জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক বিভাগের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত নতুন বই হাতে পায়নি। বছরের প্রথম তৃতীয় মাসেও নতুন বই না পাওয়ায় পড়ালেখায় ছন্দ পাচ্ছে না কোমলমতিরা। কবে নাগাদ খুদে শিক্ষার্থীরা বই পাবে তা-ও নিশ্চিত করে কিছু জানতে পারছেন না অভিভাবকরা। এতে ক্ষুব্ধ তারা। এ অবস্থা শুধু কালেক্টরেট স্কুলেই নয়; জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে সদর ও গৌরনদীর প্রাথমিক পর্যায়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখনো নতুন বই পায়নি। গৌরনদীর পূর্ব বাউরগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম গতকাল বিকালে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ওইসব শ্রেণির নতুন বই দেওয়ার কথা রয়েছে।’ শিক্ষার্থীরা জানায়, বই না পাওয়ায় তারা হোমওয়ার্ক করতে পারছে না। এতে তারা পিছিয়ে পড়ছে। বই পেলে তাদের জন্য ভালো হয়। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বলেন, বই না পাওয়ায় তাদের সন্তানরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে। বছরের প্রথম তিন মাসেও সন্তানের হাতে বই দিতে না পারায় চরম হতাশাগ্রস্ত তারা। এত মাস পর বই পেলে সন্তানদের ওপর চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তারা। বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খন্দকার অলিউল ইসলাম জানান, জানুয়ারিতে প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো বই পাননি তারা। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই পেয়েছেন। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির অঙ্ক ও বাংলা বই পেয়েছেন। মার্চে অন্যান্য শ্রেণির বইয়ের আংশিক পেয়েছেন।

এ নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সংশয়ের মধ্যে আছেন। বই দ্রুত প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা বই না পাওয়ায় ক্লাশে পড়াতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর বিপ্লব কুমার ভট্টচার্য্য।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানান, জেলার ১০ উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে ১২ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বরিশাল সদরেই ১ লাখ ১৯ হাজার বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। গৌরনদী উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই না পেলেও তাদের বই দেওয়া হয়েছে দাবি করে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার জানান, গৌরনদী উপজেলার বই মুন্সীগঞ্জ থেকে এসেছে। বরিশাল সদরের বই ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে আসছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ইতোমধ্যে বই চলে আসার কথা। কোনো কারণে এখন পর্যন্ত না এলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই এনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবেন, যাতে কোমলমতিদের সমস্যা না হয়।

সর্বশেষ খবর