রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তান্ডবের এক বছর

মামলার তদন্ত শেষ হয়নি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের নারকীয় তান্ডবের এক বছর পূর্তি ছিল গতকাল ২৬ মার্চ। তবে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। পৌরসভার কর্মকান্ড চলছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। সংস্কার কাজ চলছে প্রেস ক্লাবের। সাত মাস পর চালু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। এদিকে ২০২১ সালে হেফাজত তান্ডবের ঘটনায় যে ৫৫টি মামলা হয় সেগুলোর তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। গত বছরের ২৬ মার্চ দুপুরের পর আকস্মিকভাবে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরের কাউতলী এলাকায় জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, সার্কিট হাউস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, পৌরসভার পুকুরের ফোয়ারা, ল্যাম্পপোস্টসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও তান্ডব চালায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন জ্বালিয়ে দেয়। একই ধারাবাহিকতায় ২৭ ও ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পুলিশ লাইনস, সুহিলপুর, নন্দনপুর, সরাইল বিশ^রোড, অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ি, আশুগঞ্জ পুলিশ বক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরভবন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, শিল্পকলা একাডেমি, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ   সম্পাদক আল মামুন সরকার, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের বাড়িসহ বিভিন্ন নেতাদের বাড়ি, অফিসসহ অর্ধশত প্রতিষ্ঠানে তান্ডব চালায়।

 এই তিন দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সরকারি অফিস, সংগঠনের কার্যালয়ে নির্বিচারে হামলা-ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়। রেলস্টেশন একেবারে অচল করে দেওয়া হয়। পৌরসভার ভবন ছাড়া কোনো কিছুই রক্ষা পায়নি। রাম দা, রড, লাঠিসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানো হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তিন দিনের ওই ঘটনায় বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও ৫০ জনের মতো আহত হয় বলে দাবি হেফাজতের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় এ ঘটনা ঘটানো হয়। সে সময় জেলা সদরের বাইরে সরাইল ও আশুগঞ্জে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

ওইবারই প্রথম হেফাজত নেতাদের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয়। যদিও শীর্ষ নেতারা এ প্রক্রিয়ার বাইরে থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ পায় সরকারদলীয় নেতাদের মাঝে। সদরের সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নিজে বাদী হয়ে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে মামলা দেন। যদিও মামলা গ্রহণ হয়নি শেষ পর্যন্ত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, হ য ব র ল অবস্থার মধ্যেই আমাদের পৌরসভার কার্যক্রম চলছে এখনো। নতুন ভবন করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছি।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহিন জানান, ঘটনার বিষয়ে সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ থানায় মোট ৫৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে সিআইডি ১০টি, পিবিআই ৯টি এবং বাকি মামলাগুলো থানা এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। এসব মামলায় এজাহারনামীয় ৪৬ জন এবং সন্দেহভাজন ৭১২ জনসহ মোট ৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে ৬৩৮ জন জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। জেলহাজতে রয়েছেন ১২০ জন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর