শিরোনাম
সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটজুড়ে জাল টাকার নেটওয়ার্ক

টার্গেট রোজা ও ঈদ কারবারিদের ধরতে তৎপর র‌্যাব-পুলিশ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগজুড়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকার কারবারিরা। নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা পুরো বিভাগে জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি নজরে আসায় নজরদারি ও অভিযান বাড়িয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে জাল টাকার কারবারি কয়েকজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে সিলেট বিভাগে জাল টাকার কারবারিদের একাধিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তালিকা তৈরি করে এসব অসাধু কারবারির বিরুদ্ধে অভিযানে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোজা ও ঈদ এলে প্রতি বছরই সিলেটে বেড়ে যায় জাল টাকার ছড়াছড়ি। নিজেদের নেটওয়ার্কের লোকজনের মাধ্যমে গোটা বিভাগে জাল নোট ছড়িয়ে দেয় এ কারবারের সঙ্গে জড়িতরা। এ জন্য তারা বিভাগীয় ও জেলা শহরের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রকে টার্গেট করে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে। নানা কৌশলে তারা জাল নোট দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে। জাল নোটের কাগজ তারা কখনো দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসে, আবার কখনো দেশ থেকেই সংগ্রহ করে তারা। এরপর বাসাবাড়িতে গোপনে নোট ছাপিয়ে তা এজেন্টদের মাধ্যমে বাজারে ছড়িয়ে দেয়। গত কয়েক দিনে সিলেটে র‌্যাব-পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে জাল টাকার চার কারবারি। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ চুনারুঘাটের দেওরগাছ ইউনিয়নের কাচুয়া এলাকা থেকে ৩ লাখ টাকার জাল নোটসহ শফিকুর রহমান (৫৫) নামের এক কারবারিকে আটক করে র‌্যাব। শফিকুর রহমান চুনারুঘাটের গোবরখলার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে। র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সোমেন মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকা থেকে জাল টাকা সংগ্রহ করে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে মানুষ মারাত্মকভাবে প্রতারণার শিকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শফিকুর সেই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। র?্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুর জানায়, ঈদ পূর্ববর্তী সময়ে এ প্রতারক চক্র বিশেষভাবে সক্রিয় থাকে। এ চক্রের সদস্যরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে জাল টাকা বানায় এবং বাজারে ছড়িয়ে দেয়। চক্রটি প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে।

এর আগে ২১ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে জাল নোট দিয়ে লেনদেনের খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার বেলুয়া শ্যামপুরের তৈয়ব আলীর ছেলে মুন্না আহমদ ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শাহ সিকন্দর গ্রামের সেলিম আহমদের ছেলে সুজন আহমদ। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকার ২১টি জাল নোট উদ্ধার করা হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট সদরের তেমুখী সাহেবেরগাঁওয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকেরইভতর থেকে ৫ হাজার টাকার জাল নোটসহ আবদুল আলীম শামীম নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ। সে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শিমুলতলা নোয়াগাঁওয়ের মৃত আবদুস সোবহানের ছেলে।

সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান জানান, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে যাতে জাল নোটের কারবারিরা মানুষকে প্রতারিত করতে না পেরে সে ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এ চক্রের ওপর পুলিশের নজরদারি রয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, রোজা ও ঈদ এলে জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে ইতোমধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। তাদের কাছে থেকে এ চক্রের ব্যাপারে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর