শিরোনাম
রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

লালবানু হনুফা হাজেরাদের মুখে হাসি

প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার পর সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান

রফিকুল ইসলাম রনি, গোদাগাড়ী থেকে ফিরে

লালবানু হনুফা হাজেরাদের মুখে হাসি

আগে নিজস্ব জমি ছিল না। এখন জমিসহ ঘরের মালিক হয়েছি। আয় করার জন্য ভেড়া ও ছাগল পালন করছি। ১০টি ছাগল। সামনে কোরবানি ঈদে কয়েকটি বিক্রি করার উপযুক্ত হয়েছে। নিজেও একটা ছাগল কোরবানি দিব।

এ কথাগুলো বললেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের রানীনগর গড়বাড়ী গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ উপকারভোগী লালবানু বেগম। আরও বললেন, এখন আত্মপরিচয় দিতে পারি, নিজের জায়গা হয়েছে। স্বামী যা আয় করেন তাই দিয়ে চার সদস্যের সংসার সুখেই চলছে।

কেবল লালবানু বেগমই নয়, এমন হাসির ঝিলিক দেখা গেছে রানীনগর গড়বাড়ীর সুফলভোগী হনুফা ও হাজেরাদের মুখে। কেউ গাভী পালন করছেন, কেউ ছাগল পালন করছেন। কেউ দোকান করেছেন, কেউ কাঁথা সেলাই করে ঘরে বসেই আয় করছেন।

লালবানু বেগম বললেন, স্বামী সোহেল রানাসহ আমরা এই স্থানেই বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু সরকারি জায়গা হওয়ায় মালিকানা ছিল না। সে কারণে ঝুপড়ি ঘর করে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোয়ায় আমরা এখন জমি ও ঘরের মালিক।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় এখানে ঘর পেয়েছেন ৬০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। রঙিন টিনের পাকা বাড়িগুলো এখন অনেকটাই গৃহস্থ বাড়ির মতো। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ পদ্মা নদীর ভাঙনে হারিয়েছিল তাদের সবকিছু। এক সময়ের সব হারানো ভূমিহীন এসব পরিবার শুরু করেছেন নতুন সংগ্রাম। নতুন করে সাজাচ্ছেন নিজেদের জীবন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে বিদ্যুৎ। প্রতি পাঁচটি বাড়ির জন্য রয়েছে একটি করে সাবমার্সিবল পানির কল। তাদের অনেকের ঘরেই চোখে পড়ল টেলিভিশন। ফ্রিজও আছে দু-একটি বাড়িতে। সামনে বা পিছনের ফাঁকা জায়গায় অনেকেই তৈরি করেছেন গোয়াল ঘর। গরু, ছাগল বা মহিষ বর্গা নিয়ে লালন-পালন করছেন তারা। আঙিনায় কেউ লাগিয়েছেন নানা ধরনের সবজি। বাড়ির বারান্দায় কেউ দিয়েছেন ছোট্ট দোকান। ঘরে সেলাই মেশিনের কাজ করছেন কেউ কেউ। বাইরে নানা ধরনের কাজের পাশাপাশি এগুলো তাদের বাড়তি আয়ের পথ খুলে দিয়েছে।

কথা হয়, উপকারভোগী ইসমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, এর আগে আলীপুরে সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতেন। প্রায় এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। স্বামী নুর আলম কৃষি কাজ করেন। স্থায়ী ঠিকানা পাওয়ায় ঘরের সঙ্গেই ফাঁকা জায়গায় গরু পালনের জন্য বারান্দা করেছেন। সেখানে দুটি গাভী পালন করছেন। কিছুদিন আগে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বকনা গরু কিনেছিলেন। সেই গরুটি একটি বাচ্ছা দিয়েছে। এখন তিনটি গরু। একটি ছাগলও আছে। ইসমা আক্তার বললেন, আগে স্থায়ী জায়গা না থাকায় গরু ও ছাগল পালন করতে পারিনি। এখন ঘর পেয়ে ঘর লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় বারান্দা করে গরু পালন শুরু করেছি। গরুটি সম্প্রতি বাচ্ছা দিয়েছে। গরুর দুধ বিক্রি করা হবে। ইসমার ঘর থেকে পশ্চিমে হনুফা বেগমের ঘর। এর আগে কুমারপুরে বসবাস করতেন। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে সরকারি জায়গায় ঘর তুলে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতেন। স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় এখন সেলাই মেশিন কিনেছেন। কাঁথা সেলাই করেন। প্রতিটি কাঁথায় ২৫০-৩০০ টাকা আয় হয়। দুই ছেলে, এক মেয়ের পড়ালেখা, রান্না খাওয়ানোসহ সব কাজ শেষ করে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি। কখনো দুই দিন, কখনো তিন দিন লেগে যায় তাঁর একটি কাঁথা সেলাই করতে। স্বামীপরিত্যক্তা নাইম সুলতানার (৩০) ৬৫ বয়সের বৃদ্ধা মা শামসুন্নাহান এবং ১১ বছরের মেয়ে হুমায়ারাকে নিয়ে তার সংসার। এক সময়ের নদীতে তাদের সবকিছু কেড়ে নেয়। বিয়ের পর নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেও তা আর ধরা দেয় না নাইমের জীবনে। ছোট্ট মেয়ে ও তাকে ছেড়ে চলে যান স্বামী। বাবাহীন সংসারে ভাইদের আশ্রয়ে ছিলেন এরপর। তিনি বলেন, ভাইয়েরাও দিন এনে দিন খাওয়া। খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। চোখে অন্ধকার দেখতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাকা ঘর দিয়েছেন, স্বায়ী ঠিকানা দিয়েছেন। এখন নিজের পরিচয় পেয়েছি। মা ও মেয়েকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছি। নাইমের ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ল রঙিন টেলিভিশন। নিজে পালন করা ছাগল বিক্রি করে মা ও মেয়ের জন্য এটি কিনে দিয়েছেন তিনি। সেলাই মেশিন দিয়ে কাঁথা তৈরির কাজ করতেন নাইম। গত মাস থেকে একটি গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেছেন।

 তিনি জানান, এখন মা মেয়েকে নিয়ে অনেক ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়েছেন মো. শফিকুল ইসলাম ও আয়েশা খাতুন দম্পতি। আগে এখানেই খাস জায়গায় ছাপড়া ঘর ছিল তাদের। এখন পেয়েছেন পাকা ঘর। তারা বলেন, আগে ছাপড়া ঘর ছিল। এখন পাকা বাড়ি পেয়েছি। বাড়ির সামনে দেওয়া গোয়ালঘর দেখিয়ে বলেন, গরু বর্গা নিয়েছি। জায়গা হওয়ায় সেটা পালতে পারছি। তিন মেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তাদের সংসার। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন এখন তাদের চোখে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর