পদ্মা সেতু চালু হলে আমূল বদলে যাবে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম। গার্মেন্টস পণ্য, মেশিনারিজ নিয়ে কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়বে সরাসরি জেটিতে। ফলে নদীর মোহনা থেকে জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার চ্যানেলে সারা বছর ৮.৫ মিটার জাহাজ চলাচলে নাব্য ধরে রাখতে হবে। একইসঙ্গে আমদানি-রপ্তানির চাপ সামলাতে মোংলা বন্দরে রেলসংযোগ ও সড়কপথে যোগাযোগের উন্নতির পাশাপাশি আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, জার্মানির হামবুর্গ বন্দরের আদলে মোংলায় ২০২৫, ২০৪০ ও ২০৭০ সালের জন্য তিনটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। জানা যায়, মোংলা বন্দরের মতোই হামবুর্গ বন্দরটি উত্তর সাগর ও এলবে নদীর মোহনা থেকে ১১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত। এরপরও জাহাজের পণ্য লোড-আনলোডে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকায় একে জার্মানির পোর্ট সিটি বা ‘গেটওয়ে টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে অভিহিত করা হয়। মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, হামবুর্গ বন্দরের মতো মোংলায় জাহাজ আসতে সাগর-নদী মোহনা থেকে ১৩০ কিলোমিটার চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়। একই ধাঁচের হওয়ায় ওই বন্দরের আদলেই তিন ধাপে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হামবুর্গ বন্দর সরেজমিনে দেখে এসেছেন। এখন জার্মানির কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান ‘ইনরোস ল্যাকনার এসই’ এবং বাংলাদেশ স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের যৌথ তদারকিতে ২০২৫, ২০৪০ ও ২০৭০ সালের প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে এসব পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্র্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে মোংলার দূরত্ব কমবে। ফলে এ বন্দরের প্রতি আগ্রহী হবেন আমদানি-রপ্তানিকারকরাও। বন্দরের চাপ সামলাতে জেটির সংখ্যা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ সার্বিক বিষয়ে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন প্রতিনিয়ত বিশ্বে টেকনোলজি বদলাচ্ছে, কার্গো জাহাজের প্যাটার্ন (বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হচ্ছে, ভবিষ্যৎ লোড সামাল দিতে সময়ের প্রয়োজনে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, মোংলা চ্যানেলে নাব্য ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, হামবুর্গ বন্দরটি মোহনা থেকে ১১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে হলেও সেখানে মোংলার মতো সিলটেড (পলি ভরাট) হয় না। বর্তমানে মোংলায় সিমেন্ট ক্লিংকারবাহী জাহাজ, বাল্ক কার্গো আসছে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে গার্মেন্টস পণ্য, মেশিনারিজ নিয়ে কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়বে সরাসরি জেটিতে। তখন ইনকামিং প্যাটার্ন চেঞ্জ হয়ে যাবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে অবকাঠামো উন্নয়নে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া বন্দরে যোগাযোগে যানজট এড়াতে বড় ট্রাকস্ট্যান্ড, দিগরাজ থেকে বন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার ও হপার ড্রেজার দিয়ে চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম চালাতে হবে।